সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৫ম খন্ড, অধ্যায়ঃ দাসমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৬২৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমি মালিককে বললাম, আপনার কাছে নাফি' (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরীক (যৌথ মালিকানাধীন) ক্রীত-দাসের বেলায় তার নিজ অংশ মুক্ত করে দেয় এবং তার (মুক্তিদাতার) কাছে এই পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকে যা উক্ত ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ পৌছে যায় তবে ন্যায় সঙ্গতভাবে মূল্য নিরুপণ করতে হবে। অতঃপর অন্যান্য অংশীদারদের হিস্যার মূল্যও তাকে পরিশোধ করতে হবে। আর ক্রীতদাসটি পুরোপুরিভাবে তার পক্ষ থেকেই মুক্ত হরে যাবে। তবে যদি সে (পুরো অংশের মূল্য পরিশোধে) সক্ষম না হয় তাহলে সে যতটুকু অংশ মুক্ত করেছে ততটুকু মুক্ত হয়ে যাবে।
৩৬৩০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ, শায়বান ইবনু ফাররুখ, আবুর রাবী, আবূ কামিল, ইবনু মুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইসহাক ইবনু মানসুর, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মালিক (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী।
৩৬৩১. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ক্রীতদাসটি দু'জনের মালিকানাধীন তার একজন নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে অপরজনের হিস্যারও সে যিম্মাদার হবে (যদি সে বিত্তবান হয়)।
৩৬৩২. আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন গোলামকে নিজেরা হিস্যা মুক্ত করে দিবে তার বাকী অংশ তার সস্পদ দ্বারাই করতে হবে যদি সে ধনবান হয়। আর যদি সে বিত্তশালী না হয় তাহলে সে গোলামকে উপার্জনের মাধ্যমে আযাদী লাভের চেষ্টায় নিযুক্ত করতে হবে। তবে তার উপর তার সামর্থের বাইরে বোঝা চাপানো যাবে না।
৩৬৩৩. আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত। তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন যে, "যদি সে মুক্তিদাতা বিত্তবান না হয় তখন ঐ ক্রীতদাসের প্রচলিত মূল্য নিরুপণ করতে হবে। এরপর তার অবশিষ্ট অংশ মুক্ত করার লক্ষ্যে উপার্জনে নিয়োজিত করতে হবে। তবে এই ব্যাপারে তাকে সাধ্যাতীত কষ্টে ফেলা যাবে না।"
৩৬৩৪. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ওয়াহব ইবনু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ) কে এ সনদে ইবনু আবূ আরুবা এর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি তার বর্ণনায় উল্লেখ করেন, "দাসের উপযুক্ত মূল্য নিরুপণ করতে হবে।"
পরিচ্ছেদঃ ১. মুক্তদাসে অভিবাবকত্ব হবে মুক্তিদাতার
৩৬৩৫. ইয়হইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার একটি দাসী খরিদ করে তাকে মুক্ত করে দিবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তখন সে দাসীর মনিবেরা তাকে জানালেন যে, আমরা আপনার কাছ থেকে এই শর্তে দাসটি বিক্রয় করতে পারি যে, তার ওয়ালার অধিকারী আমরাই থাকব। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, এই শর্ত তোমাকে ওয়ালা থেকে বঞ্চিত করবে না। কেননা মুক্তিদাতার জন্যই 'ওয়ালার হক' নির্ধারিত।
৩৬৩৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উরওয়া (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) তাঁর লিখিত মুক্তি চুক্তির বিনিময় পরিশোধের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এল। সে তার লিখিত মুক্তিপণের কিছুই আদায় করে নি। তখন আয়িশা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার মুনিবের কাছে ফিরে যাও। যদি তারা এ শর্তে সন্মতি জ্ঞাপন করে যে, আমি তোমার লিখিত মুক্তিপণের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করলে তোমার ওয়ালা আমার প্রাপ্য হবে, তবে তা আমি করতে পারি। বারীরা তার মুনিবদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করল। কিন্তু তারা সে প্রস্তাব গ্রাহ্য করল না এবং বলে পাঠাল, যদি তিনি সাওয়াবের আশায় তোমার লিখিত মুক্তিপণ আদায়ের দায়িত্ব নেন তাহলে নিতে পারেন, তবে তোমার ওয়ালা আমাদের জন্যই থাকবে।
এরপর তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বিষয়টি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থাপন করলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার। কেননা ওয়ালা, মুক্তিদাতার জন্যই নির্ধারিত। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ লোকদের কী হয়েছে তারা এমন কতক শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে ব্যক্তি এমন শর্তারোপ করবে যা আল্লাহর কিতাবে নেই- সে শর্তের কোন মূল্য নেই যদি ও সে একশো বার শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই কেবল যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য।
৩৬৩৭. আবূ তাহির (রহঃ) ... উরওয়া ইবনুয যুবায়র (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। সে বলল, হে আয়িশা! আমি আমার মুনিবের কাছে মুক্তিপণের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি যে, বছরে এক উকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) করে নয় বছরে সর্বমোট নয় উকিয়া পরিশোধ করব। এরপর লায়স (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
তবে এই বর্ণনায় এতটুকু বেশী আছেঃ তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদের এ শর্ত করা তোমাকে “ওয়ালা” প্রাপ্তি হতে বাধা দিবে না। তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার। উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) এই হাদীসে উল্লেখ করেন, তখন রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করেন।
৩৬৩৮. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) ... আবু উসামা হতে, তিনি হিশাম ইবন উরওয়া (রহঃ) হতে, তিনি নিজ পিতা হতে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মুনিব আমাকে প্রতি বছর এক উকিয়া করে নয় বছরে নয় উকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তিদানের চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি [আয়িশা (রা)] তাকে বললাম, তোমার মুনিব যদি এই শর্তে রাজী হয় যে, তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার “ওয়ালা” আমার প্রাপ্য হবে তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।
তখন বারীরা (রাঃ) এই বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উত্থাপন করলে তাদের জন্য 'ওয়ালা' ব্যাতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার (আয়িশা (রা) এর) কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, তাহলে আল্লাহর কসম! আমি রাজী নই। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এরপর তিনি বললেন, হে আয়িশা! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্তে রাবী হয়ে যাও। প্রকৃত পক্ষে ওয়ালা সেই পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (আয়িশা) তাই করলাম।
রাবী বলেন, এরপর সন্ধ্যাবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা এই পর্যায়ে নেমে গিয়েছে যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও শতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ, আল্লাহর শর্তই নির্ভরযোগ্য। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কি হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর 'ওয়ালা' গ্রহণ করব আমরা? অথচ “ওয়ালা” তো তারই যে আযাদ করে।
৩৬৩৯. আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব ইবন নুমায়র হতে, আবু কুরায়ব ওয়াকী (রহঃ) হতে, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জারীর হতে, আর তারা সকলে হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) হতে আবু উসামা ... হিশাম বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ একই সনদে বর্ণনা করেছেন।
তবে জারীর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছেঃ তিনি বলেন, তার (বারীরার) স্বামী ছিল দাস। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইখতিয়ার দান করেছিলেন। (যখন সে মুক্ত হবে তখন দাস স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রাখতে কিংবা তা নাকচ করে দিতে পারবে- এই ইখতিয়ার তাকে দেওয়া হয়েছিল)। সে নিজকেই বেছে নিল (দাস স্বামীকে পছন্দ করল না)। যদি সে স্বাধীন হত তাহলে তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে (বারীরাকে) ইখতিয়ার প্রদান করতেন না। আর তাদের বর্ণিত হাদীসে أَمَّا بَعْدُ (অতঃপর) শব্দটির উল্লেখ নেই।
৩৬৪০. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরার কল্যাণে তিনটি শরী’আতী বিধান লাভ হয়েছিলঃ
১. তার মুনিবেরা তাকে বিক্রি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবং তার ‘ওয়ালার’র উপর তাদের অধিকার লাভের শর্তারোপ করেছিল। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলাম। তিনি আমাকে বললেন, তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা ‘ওয়ালা’ তারই প্রাপ্য যে আযাদ করে।
২. যখন তাকে (বারীরাকে) মুক্ত করে দেওয়া হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (তার দাস স্বামীকে রাখা, না রাখার) ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। এরপর সে নিজকে বেছে নিল। (তার দাস স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করল)।
৩. তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেন, লোকেরা বারীরাকে সদকা-খয়রাত করত এবং সে তা (সদকাকৃত জিনিস) থেকে আমাদের কাছে হাদিয়া পাঠাত। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, “তা তার জন্য সদকা এবং তোমাদের জন্য হাদিয়া। সুতরাং তোমরা তা খেতে পার।”
৩৬৪১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কতিপয় আনসার মুনিবের কাছ থেকে বারীরাকে খরিদ করলেন। তবে তারা (সে সময়) ‘ওয়ালা’র শর্তারোপ করেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘ওয়ালা’ তারই প্রাপ্য যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করে (মুক্তিদাতা)। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। তার স্বামী ছিল ক্রীতদাস। একবার সে আয়িশা (রাঃ) এর কাছে কিছু পরিমাণ গোশত হাদিয়া পাঠাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা যদি এই গোশত থেকে আমার জন্য কিছুটা রান্না করে আনতে......। তখন আয়শা (রাঃ) বললেন, এতো বারীরা সদকা হিসেবে পেয়েছে (আর আপনার জন্য সদকা হারাম)। তিনি বললেন, তা তার জন্য সদকা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।
৩৬৪২. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মুক্ত করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বারীরাকে খরিদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু তারা (বারীরার মুনিবেরা) তার “ওয়ালার” অধিকার লাভের শর্তারোপ করে বসল। তখন তিনি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উত্থাপন করলেন। তিনি বললেন, তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। আসলে “ওযালা” সেই পাবে যে মুক্তিদান করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু গোশত হাদিয়া রুপে পেশ করা হল। তখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, এই গোশত বারীরাকে সাদাকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এতো তার জন্য সাদাকা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া। তাকে (বারীরাকে) এ অবস্থায় ইখতিয়ার দেওয়া হল যে, তার স্বামী ছিল স্বাধীন। শু'বা (রহঃ) বলেন, আমি পুনরায় তাকে (আবদুর রহমানকে) তার (বারীরার) স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি জানি না।
৩৬৪২/১। আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৩৬৪৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবন বাশশার (রহঃ) ... আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, বারীরার স্বামী ছিল দাস।
৩৬৪৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী অয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরার ঘটনায় তিনটি বিধান জারী হয়েছে
১. যখন সে মুক্তি লাভ করেছিল তখন স্বামীর (বৈবাহিক সূত্র বহাল রাখা, না রাখার) ব্যাপারে তাকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয়েছিল।
২. তাকে গোশত সাদাকা করা হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার (আয়িশার) কাছে এলেন। তখন গোশতের হাড়ি উনুনের উপর টগবগ করছিল। তিনি খাবার চাইলেন। তখন তাঁর সামনে রুটি এবং ঘর থেকে তরকারী পরিবেশন করা হল। তিনি বললেন, আমি কি লক্ষ্য করি নি যে, উনুনের উপর হাঁড়ি আছে যার মধ্যে গোশত রয়েছে। তারা বললেনঃ জি হাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওটা তো এমন গোশত যা বারীরাকে সাদাকা করা হয়েছে। আমরা তা থেকে আপনাকে খাওয়ানো পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, এতে তার জন্য সাদাকা এবং তার পক্ষ থেকে তা আমাদের জন্য হাদিয়া।
৩. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (বারীরার) মুক্তির ব্যাপারে বললেন, "ওয়ালা" তারই প্রাপ্য যে আযাদ করে।
৩৬৪৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আয়িশা (রাঃ) একটি দাসী খরিদ করে মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তার মুনিবেরা তাদের জন্য তার ব্যতিরেকে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। তবে “ওয়ালা” তাদের থাকলে ভিন্ন কথা। তিনি এই বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উত্থাপন করলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে খরিদ করে মুক্তি দিয়ে দাও। তা (মুক্তি দেওয়া) তোমাকে “ওয়ালা” থেকে বাধাপ্রাপ্ত করবে না। কেননা "ওয়ালা" তারই প্রাপ্য যে মুক্তিদান করে।
পরিচ্ছেদঃ ২. ওয়ালা বিক্রি কিংবা হেবা করা নিষিদ্ধ
৩৬৪৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'ওয়ালা' বিক্রি করা এবং তা হেবে (দান বা উইল) করা নিষিদ্ধ করেছেন। মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, সকল মানুষ এই হাদিসের ব্যপারে আবদুল্লাহ ইবনু দীনারের কৃপাধন্য [অর্থাৎ ইবন উমর (রাঃ) থেকে এ হাদিসটি কেবল তার সুত্রেই পাওয়া গেছে]
৩৬৪৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু হুজর, ইবনু নুমায়র, ইবনু মুনান্না ও ইবনু রাফি ... আবদুল্লাহ ইবন দীনার ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে [আবদুল ওয়াহহাব] সাকাফীর বর্ণনায় উবায়দুল্লাহর সুত্রে কেবল বিক্রির কথা বলা হয়েছে। তিনি হেবার কথা উল্লেখ করেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ৩. মুক্তদাসের জন্য তার মুক্তিদাতা ব্যতীত অন্য কাউকে মাওলা বানানো হারাম
৩৬৪৮. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান জারি করলেন যে, প্রত্যেক গোত্রের উপর তৎকর্তৃক হত্যাকাণ্ডের ক্ষতিণূরণ ওয়াজিব হবে। এরপর তিনি লিখলেন, কোন মুসললিম ব্যক্তির পক্ষে অপর মুসলিম ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার মুক্তি দেওয়া গোলামের অলী (অভিবাবক) হওয়া হালাল নয়। এরপর আমি জানতে পারলাম যে, যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে তিনি তার লিখিত ফরমানে তাকে লা'নত করেছেন।
৩৬৪৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ক্রীতদাস) তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মুনিব বানাবে তার উপর আল্লাহর লা'নত এবং তার ফিরিশতাদেরও লা'নত। তার ফরয কিংবা নফল কিছুই (আল্লাহর কাছে) কবুল হবে না।
৩৬৫০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মাওলা বানাবে তার উপর আল্লাহর লা'নত, ফিরিশতা ও সমগ্র মানব জাতির লা'নত বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে তার কোন ফরয কিংবা নফল আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না।
৩৬৫১. ইবরাহীম ইবনু দীনার (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত- তবে এতে বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মুনীবের অনুমতি ছাড়া অন্যকে মাওলা বানাবে ......।”
৩৬৫২. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ইবরাহীম তায়মী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, যে ব্যক্তি মনে করে যে, এই ক্ষুদ্র পুস্তিকা ও আল্লাহর কিতাব ব্যতীত আমাদের কাছে যা আমরা পাঠ করি, সে নিশ্চিত মিথ্যা বলছে। বর্ণনাকারী বললেন, সে সময় তার (আলীর) তরবারীর খাপের মধ্যে একথানি পুস্তিকা ঝুলানো ছিল। এই পুস্তিকায় উটের দাঁতের বিবরণ ছিল এবং যখমের দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে বিধান ছিল। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার 'আয়র' থেকে 'সাওর' পর্বত পর্যন্ত এলাকা হারাম (সংরক্ষিত স্থান)। যে ব্যক্তি এই এলাকায় বিদ'আত করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লানত, তাঁর ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল কবুল করবেন না। সকল মুসলমানের যিম্মা অভিন্ন। একজন আদনা (সাধারণ) মুসলমানও তা প্রদান করতে পারবে।
যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যদি কোন দাস তার মুনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মুনিব বানাবে, তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতা ও সমগ্র মানব জাতির লা'নত বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দাসমুক্তির ফযীলত
৩৬৫৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করে দিবে, আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যেঙ্গের বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।
৩৬৫৪. দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন ঈমানদার দাসকে মুক্ত করে দিবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন-এমন কি তার লজ্জাস্থানের বিনিময়ে তার লজ্জা স্থানও।
৩৬৫৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ঈমানদার ক্রীতদাস মুক্ত করবে আল্লাহ তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন- এমনকি তিনি তার (মুক্তদাসের) গুপ্তস্থানের পরিবর্তে তার (মুক্তিকারীর) গুপ্তস্থানও রক্ষা করবেন।
৩৬৫৬. হুমায়দ ইবনু মাস'আদা (রহঃ) ... আলী ইবন হুসায়ন এর সহচর সা'ঈদ ইবন মারজানা (রহঃ) বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করলে আল্লাহ তার (মুক্ত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার (মুক্তিদাতার) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রহঃ) বললেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই হাদীস শোনার পরপরই আলী ইবনু হুসায়ন এর কাছে গেলাম এবং তাঁর কাছে হাদীসখানি উপস্থাপন করলাম। তখনই তিনি তাঁর একটি গোলাম (ক্রীতদাস) মুক্ত করে দিলেন যার বিনিময় মূল্য হিসেবে তিনি ইবনু জাফরকে দশ হাজার দিরহাম অথবা এক হাজার দীনার পরিশোধ করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. পিতাকে মুক্ত করার ফযীলত
৩৬৫৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাস হিসেবে দেখতে পায় এবং তখনি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দেয় (তাহলে ভিন্ন কথা)।
ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে وَلَدٌ وَالِدَهُ ' সন্তান তার পিতার'।
৩৬৫৮. আবূ কুরায়ব, ইবনু নুমায়র ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তারা তাদের বর্ণনায় বলেছেন وَلَدٌ وَالِدَهُ সন্তান তার পিতার।
No comments: