Breaking News
recent

দাফন

দাফন
১।মাসআলাঃ মাইয়্যেতের গোসল, (কাফন) এবং জানাযা যেমন ফরযে কেফায়া, দাফন করাও তেমনই ফরযে কেফায়া।
২, ৩।মাসআলাঃ জানাযার নামায শেষ হওয়া মাত্রই জানাযা কবরে লইয়া যাইবে। লইয়া যাওয়ার সুন্নত তরীকা এইঃ যদি ছোট বাচ্চা হয়, তবে একজন লোকে তাহাকে দুই হাতের উপর উঠাইয়া লইবে, তারপর তাহার নিকট হইতে অন্য একজনে নিবে; এইরূপে বদলাইয়া লইয়া যাইবে। আর যদি লাশ বড় হয়, তবে তাহাকে খাটলিতে করিয়া চারিজন তাহার চারি পায়া দুই হাতে ধরিয়া কাঁধে রাখিয়া সসম্মানে লইয়া যাইবে। মৃতকে অন্যান্য বোঝার মত কাঁধে করিয়া নেওয়া অথবা বিনা ওযরে গাড়ী-ঘোড়ায় করিয়া নেওয়া জায়েয।
৪।মাসআলাঃ মাইয়্যেতের খাটলি বহন করিবার পরে যাহারা বদলাইয়া বদলাইয়া নিবে তজ্জন্য মোস্তাহাব তরীকা হইলপ্রথমে খাটলির আগের ডান পার্শ্বের পায়া অর্থাৎ, মৃতের ডান হাতের দিকের পায়া) ডান কাঁধের উপর লইয়া অন্ততঃ পক্ষে দশ কদম হাঁটিয়া তারপর ঐ পার্শ্বেরই পাছের পায়া ডান কাঁধে লইয়া অন্ততঃ দশ কদম হাঁটিয়া তারপর বাম পার্শ্বের সামনের পায়া ধরিয়া বাম কাঁধে রাখিয়া অন্ততঃ দশ কদম চলিবে। এইরূপে প্রত্যেকের চেহেল কদমি (চল্লিশ কদম বহন করা) হইয়া যাইবে। (যদি প্রত্যেক পায়ার সহিত চল্লিশ কদম চলে, তবে তাহা আরও উত্তম। হাদীস শরীফে আছেঃ ‘মাইয়্যেতকে লইয়া চল্লিশ কদম হাঁটিলে তাহার চল্লিশটি গোনাহ মাফ হইয়া যাইবে।’)
৫।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে দ্রুত কবরস্থানে লইয়া যাওয়া সুন্নত। কিন্তু এইরূপ দ্রুত দৌড়াইবে না যে, লাশ নড়িতে থাকে। (এরূপ দ্রুত দৌড়ান মকরূহ।)
৬।মাসআলাঃ জানাযার সঙ্গে যাহারা যাইবে, জানাযা কাঁধ হইতে নামাইয়া রাখার পূর্বে তাহাদের বসা মকরূহ। অবশ্য দরকারবশতঃ বসিলে দোষ নাই।
৭।মাসআলাঃ যাহারা জানাযার সঙ্গে যাইতেছে না, কোথাও বসিয়া আছে, জানাযা দেখিয়া তাহাদের দাঁড়াইয়া যাওয়া উচিত নহে।
৮।মাসআলাঃ জানাযার সঙ্গে গমনকারীদের জানাযার পাছে পাছে যাওয়া মোস্তাহাব। কেহ যদি আগে যায়, তাহাও জায়েয আছে। কিন্তু যদি সকলেই আগে যায়, তবে তাহা মকরূহ। এইরূপে ঘোড়া বা গাড়ীতে আগে আগে যাওয়াও মকরূহ।
৯।মাসআলাঃ জানাযার সঙ্গে পায়ে হাঁটিয়া যাওয়া মোস্তাহাব, যদি কেহ গাড়ী ঘোড়ায় যায়, তবে সে পিছে পিছে যাইবে।
১০।মাসআলাঃ (জানাযার সঙ্গে যাওয়াতে অনেক ছওয়াব আছে) যাহারা সঙ্গে যাইবে তাহাদের উচ্চ স্বরে দো’আ কালাম পড়া মকরূহ (এবং কবরস্থানে গিয়া হাসি-ঠাট্টা করা বা বাজে কথা বলা মকরূহ।)
কবরের গভীরতা অন্ততপক্ষে লাশের অর্ধেক হওয়া চাই এবং পূর্ণ এক ক্বদের চেয়ে বেশী লম্বা হওয়া উচিত নহে। কবর মাইয়্যেতের ক্বদের পরিমাণ লম্বা হইবে, অনেক বেশী লম্বা হওয়া ঠিক নহে। (যতখানি লম্বা তাহার অর্ধেক চওড়া হওয়া চাই।) বগলি কবর সিন্দুকী কবরের চেয়ে উত্তম। কিন্তু যদি মাটি নরম হয়, বগলি খুঁড়িলে কবর বসিয়া যাওয়ার আশংকা থাকে, তবে বগলি কবর খুঁড়িবে না।
(কবর খুঁড়িবার নিয়মঃ প্রথমে দিক সোজা করিয়া উত্তর শিয়রে দৈর্ঘ্যে ৪ হাত, প্রস্থে ১ হাত (পৌনে দুই হাত) এবং ২, ২.৫ কিংবা ৩ হাত গভীর একটি গর্ত খুঁড়িবে। তারপর তাহার পশ্চিম পার্শ্বের দেয়ালের ভিতর নীচে ছোট একটি গর্ত খুঁড়িবে, ইহাকে বগলি কবর বলে। আর যদি ঐ গর্তটির মাঝখানে (শোয়াইবার জন্য) ছোট একটি গর্ত খোঁড়া হয়, তবে তাহাকে সিন্দুকী কবর বলে।
১১।মাসআলাঃ যদি মাটি নরম হওয়ায় অথবা অন্য কোন কারণে বগলি কবর খোঁড়া না হয়, তবে মাইয়্যেতকে একটি কাঠ, পাথর বা লোহার সিন্দুকের মধ্যে রাখিয়া সিন্দুকটি মাটির গর্তের মধ্যে দাফন করিয়া দেওয়া জায়েয আছে। কিন্তু যদি এইরূপ সিন্দুকের মধ্যে দাফন করিতে হয়, তবে সিন্দুকের ভিতরে নীচে কিছু মাটি বিছাইয়া দেওয়া (এবং উপরের কাঠখানা ভিতরের দিক দিয়া মাটি দ্বারা লেপিয়া দেওয়া এবং কাঁচা ইট পাওয়া গেলে দুই পার্শ্বে বিছাইয়া দেওয়া অথবা দুই পার্শ্বেও মাটি দ্বারা লেপিয়া দেওয়া) উচিত। (অগ্নি সংস্পর্শে নির্মিত লৌহ ইত্যাদির সিন্দুক দেওয়া মকরূহ।
১২।মাসআলাঃ কবর প্রস্তুত হইয়া গেলে মাইয়্যেতকে পশ্চিম দিক দিয়া নামাইবে, তাহার নিয়ম এই যে, মাইয়্যেতের খাটলিকে উত্তর শিয়রে করিয়া কবরের পশ্চিম রোখ হইয়া দাঁড়াইয়া মাইয়্যেতকে হাতের উপর রাখিয়া নামাইবে।
১৩।মাসআলাঃ কবরের মধ্যে যাহারা মাইয়্যেতকে নামাইবে তাহাদের সংখ্যা জোড় বা বেজোড় হওয়া সুন্নত নহে। হযরত নবী আলাইহিস সালামকে তাঁহার কবর শরীফে চারিজনে ধরিয়া নামাইয়া ছিলেন।
১৪।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে কবরে রাখিবার সময়[আরবি]
অর্থ- ‘আল্লাহর নামের উপর ও রসূলুল্লাহর দ্বীনের উপর রাখিতেছি’ বলা মোস্তাহাব।
১৫।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে ডান কাতে ক্বেবলামুখী করিয়া শোয়ান সুন্নত। তাহাতে আবশ্যক হইলে মাথা এবং পিঠের নীচে কাঁচা ইট বা মাটি দিয়া দেওয়া যায়।
১৬।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে কবরে রাখিয়া (পায়ের ধারে, মাথার ধারে বা মাঝখানে) কাফন খুলিয়া যাওয়ার ভয়ে যেসব বাঁধন দেওয়া হইয়াছিল তাহা সব খুলিয়া দিবে।
১৭।মাসআলাঃ তারপর কাঁচা ইট অথবা বাঁশ দ্বারা কবরের মুখ বন্ধ করিয়া দিবে। তক্তা বা পাকা ইটের দ্বারা কবরের মুখ বন্ধ করা মকরূহ। অবশ্য যেখানে মাটি খুব নরম ও কবর বসিয়া যাওয়ার ভয় আছে, পাকা ইট কিংবা সেখানে কাঠের তক্তা রাখিয়া দেওয়া কিংবা সিন্দুকে রাখাও জায়েয। (বগলি কবরের মুখ বন্ধ করিতে কাঁচা ইট অথবা বাঁশ খাড়া করিয়া দিতে হয়। হযরত নবী আলাইহিস সালামের কবর শরীফে ৯ খানা ইট খাড়া করিয়া দেওয়া হইয়াছিল।)
১৮।মাসআলাঃ মেয়েলোককে কবরে রাখিবার সময় পর্দা করা মোস্তাহাব। (এইরূপে খাটলির উপরও পর্দা করা মোস্তাহাব। যদি শরীর খুলিয়া যাইবার আশংকা থাকে, তবে পর্দা করা ওয়াজিব।)
১৯।মাসআলাঃ পুরুষকে দাফন করিবার সময় পর্দা করিবে না। অবশ্য যদি বৃষ্টি, বরফ বা রৌদ্রের জন্য পর্দা করা হয়, তবে তাহা জায়েয।
২০।মাসআলাঃ মাইয়্যেতকে কবরের মধ্যে রাখার পর ঐ কবর হইতে যত মাটি বাহির হইয়াছে, তাহা সব কবরের উপর দিবে; তাহা ছাড়া অতিরিক্ত মাটি দেওয়া মকরূহ। কবর বিঘত খানিক উঁচু করিতে যদি অন্য মাটি লাগে, তবে সে পরিমাণ মাটি নেওয়া মকরূহ নহে। কিন্তু যদি অন্য মাটির দ্বারা িএক বিঘতের চেয়ে অনেক বেশী উঁচু করা হয়, তবে তাহা মকরূহ। অবশ্য ঐ কবরের মাটিতেই যদি এক বিঘতের চেয়ে সামান্য কিছু উঁচু করা হয়, তবে তাহা মকরূহ। অবশ্য ঐ কবরের মাটিতেই যদি এক বিঘতের চেয়ে সামান্য কিছু উঁচু হইয়া যায় তবে তাহা মকরূহ নহে।
২১।মাসআলাঃ দাফন ক্ষেত্রে উপস্থিত সকলেরই তিন তিন মুঠ মাটি দেওয়া মোস্তাহাব, মাটি মাথায় দিক হইতে উভয় হাতে দিবে। প্রথম মুঠি দিবার সময় বলিবেঃ [আরবি]
অর্থ- (আল্লাহ বলিয়াছে) ‘এই মাটি দ্বারাই আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি।’ (হে আল্লাহ!তাহাকে কবরের চাপ এবং কবরের আযাব হইতে বাঁচাও।)
দ্বিতীয় মুঠা দিবার সময় বলিবেঃ
[আরবি]
অর্থ- (আল্লাহ বলিয়াছেন) ‘এই মাটির ভিতরের পুনরায় আমি তোমাদিগকে আনিব।’ (হে আল্লাহ! তাহার রূহের জন্য আসমানের দরজা খুলিয়া দাও।)
তৃতীয় মুঠা দিবার সময় বলিবেঃ
[আরবি]
অর্থ- (আল্লাহ্ বলিয়াছেন) ‘এই মাটির ভিতর হইতে পুনরায় আমি তোমাদিগকে বাহির করিব।’ (হে আল্লাহ্! তাহাকে তোমার রহমতে বেহেশতে স্থান দান কর।)
২২।মাসআলাঃ দাফন করার পর কিছুক্ষণ কবরের নিকট অপেক্ষা করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দো’আয়ে মাগফেরাত করা বা কিছু কোরআন পাক পড়িয়া ছওয়াব বখশিয়া দেওয়া মোস্তাহাব। (মাথার দিকে দাঁড়াইয়া সূরা-বাক্কারার শুরুর তিন আয়াত এবং পায়ের দিকে দাঁড়াইয়া শেষের তিন আয়াত পড়া মোস্তাহাব। কবর দেওয়ার পর তলক্বীন করাও ভাল। তলক্বীনঃ একজন লোক মৃতকে সম্বোধন করিয়া বলিবেঃ
[আরবি]
অর্থ- ‘হে অমুকের পুত্র অমুক, তুমি তোমার ধর্ম-বিশ্বাস এবং ঈমানকে স্মরণ কর। দুনিয়াতে তুমি বিশ্বাস, স্বীকার এবং প্রকাশ করিয়াছিলে যে, এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ বা উপাস্য নাই, মোহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর রসূল। বেহেশত দোযখ সত্য, কিয়ামত যে হইবে এবং সকলের যে পুনরায় জীবিত হইয়া হিসাব-নিকাশ দিতে হইবে তাহা সত্য, ইহাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই। সমস্ত কবরবাসীকে আল্লাহ্ তা’আলা পুনরায় জীবিত করিবেন এবং সকলের হিসাব নিবেন। তুমি দুনিয়াতে একমাত্র আল্লাহকেই মা’বুদ বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলে এবং তাহাতেই সন্তুষ্ট ছিলে, অন্য কাহাকেও মা’বুদ বলিয়া গ্রহণ বা স্বীকার কর নাই এবং আল্লাহর শেষ নবী মোহাম্মদ (দঃ) কে নবীরূপে পাইয়া সন্তুষ্টি ছিলে এবং তাঁহারই তরীকা অনুযায়ী চলিয়াছিলে। তাঁহার পর অন্য কাহাকেও নবী বলিয়া স্বীকার কর নাই বা অন্য কাহারও তরীকা ধরিয়া চল নাই এবং ইসলামকে ধর্মরূপে পাইয়া সন্তুষ্ট ছিলে। অন্য কোন ধর্মে যে যুক্তি বা সত্য আছে, তাহা বিশ্বাস কর নাই বা ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি ব্যতীত অন্য কোন রীতিনীতিকে পছন্দ কর নাই। অনুসরণের জন্য একমাত্র কোরআনকে তুমি অবলম্বন করিয়াছিলে, একমাত্র কা’বাকে তুমি ক্বেবলারূপে ধারণ করিয়াছিলে এবং তুমি সব উম্মতে মোহাম্মদীকে ভাইরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে। হে অমুকের পুত্র অমুক! তুমি তোমার এইসব ঈমানের কথা স্মরণ কর। মুনকার-নকীরের সওয়ালের জওয়াব ঠিক ঠিক দাও।’ (কবরে না-বালেগের সওয়াল-জওয়াব হইবে না, কাজেই না-বালেগের কোন তলকীনের দরকার নাই।)
২৩।মাসআলাঃ মাটি দেওয়ার পর কবরে পানি ছিঁটাইয়া দেওয়া মোস্তাহাব। (পানি মাথার দিক হইতে ছিঁটাইবে।) কিন্তু কবর লেপা মকরূহ।
২৪।মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে ছোট বা বড় ঘরের মধ্যে কবর দেওয়া নিষেধ। কেননা, ঘরের মধ্যে কবর পাওয়া পয়গম্বরের জন্য খাছ।
২৫।মাসআলাঃ কবরের উপরটা চতুষ্কোণ বানান মকরূহ। বিঘাত খানেক উঁচু করিয়া উটের পিঠের ন্যায় মাঝখানে উঁচু এবং দুই দিকে ঢালু বানান মোস্তাহাব।
২৬।মাসআলাঃ কবর এক বিঘত হইতে অনেক উঁচু করা, চুনা সুরকি দিয়া পাকা করা বা লেপা মকরূহ তাহরীমী।
২৭।মাসআলাঃ দাফন করার পর কবরের উপর সৌন্দর্য্যের জন্য গুম্বজ বা পাকা ঘর বানা হারাম এবং মযবুতির জন্য পাকা বানান মকরূহ। এইরূপ স্মরণার্থে কবরের উপর কিছু লিখিয়া রাখার যদি আবশ্যক হয়, তবে তাহা জায়েয, নতুবা জায়েয নহে। কিন্তু এই যুগের সর্বসাধারণ যেহেতু তাহাদের আকীদাহ এবং আমল অত্যন্ত খারাপ করিয়া ফেলিয়াছে, সে কারণে মোবাহ জিনিসও না-জায়েয হইয়া যায়। এজন্য এসব কাজ একেবারেই না-জায়েয হইবে আর তাহারা যে কারণে প্রয়োজনীয়তার স্বপক্ষে দর্শায় তাহা সবই নফসের বাহানা, তাহারা নিজেরাও একথা মনে মনে অনুভব করে।
[মাসআলাঃ দাফন করার পর কবরের উপর কোন তাজা ডাল পুঁতিয়া দেওয়া (বা সরিষা বীজ ছিঁটাইয়া দেওয়া) ভাল-মোস্তাহাব]
[মাসআলাঃ প্রত্যেক শুক্রবারে (শুক্রবারে না পারিলে বৃহস্পতিবার বা শনিবার] কবরস্থানে গিয়া কবরের কথা, কবর আযাবের কথা এবং দুনিয়ার যিন্দেগীর অসাড়তার কথা চিন্তা করিয়া দিলকে নরম করা এবং ব্যক্তিদের জন্য কিছু ছওয়াব বখশিয়া দেওয়া মোস্তাহাব। ছওয়াব বখশিবার কয়েকটি তরীকা আছে। ১ম তরীকা এই যে, কিছু পয়সা-কড়ি, ভাত-কাপড় বা ফল-তরকারী কোন অভাবগ্রস্ত মু’মিন লোককে দান করিয়া আল্লাহর নিকট দো’আ করিবে যে, আয় আল্লাহ! ইহার ছওয়াব অমুককে পৌঁছাইয়া দিন। ২য় তরীকা এই যে, ছদকায়ে জারিয়ার কোন কাজ করিয়া, যথা- ইসলামী মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, তালেবে এলেমদের খরচ, মোদাররেসগণের খরচ, দ্বীনি কিতাব ইত্যাদি কাজে কিছু টাকা-পয়সা বা স্থাবর সম্পত্তি দান বা ওয়াকফ করিয়া আল্লাহর কাছে দো’আ করা যে, আয় আল্লাহ্! ইহার যা কিছু ছওয়াব হয়, অমুককে পৌঁছাইয়া দিন। অথবা নিজে জীবিতাবস্থায় কিছু স্থাবর সম্পত্তি ওয়াকফ বা ওছীয়ত করিয়া দাও, যাহার আয় সৎকাজে ব্যয় করা হইবে। এই দুই প্রকার দানের ছওয়াব হইবার শর্ত এই যে, নিয়্যতের মধ্যে যেন গোলমাল না হয় অর্থাৎ, লোকের নিকট নাম, যশ বা সুখ্যাতির নিয়্যত হওয়া উচিত নহে। খালেছ আল্লাহর ওয়াস্তে নিয়্যত করিবে, নতুবা ছওয়াবও হইবে না, পৌঁছিবেও না। ৩য় তরীকা এই যে, কোরআন শরীফের কিছু অংশ খালেছ নিয়্যতে পাঠ করিয়া, যথা- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার প্রথম ও শেষ তিন আয়াত, সূরা এখলাছ তিনবার বা এগার বার, সূরা আলহাকোমুত্তাকাছোর, সূরা ইয়াসীন, সূরা তাবারাকাল্লাযী ইত্যাদি অথবা পূর্ণ কোরআন শরীফ খালেছ নিয়্যতে পড়িয়া, নফল নামায, রোযা বা হজ্জ করিয়া, দুরূদ শরীফ পড়িয়া, তসবীহ তাহলীল খালেছ নিয়্যতে পড়িয়া সওয়াব বকশিয়া দিবে। তসবীহ-তাহলীলের এই পাঁচটি দো’আ।
[আরবি]
ছওয়াব বখশিবার নিয়ম এই যে, পড়িবার সময় খালেছ নিয়্যতে ভক্তির সহিত পড়িবে। পয়সা-কড়ি বা দুনিয়ার কোন স্বার্থের উদ্দেশ্যে পড়িলে ছওয়াব হইবে না। পড়িবার পর আল্লাহর নিকট দো’আ করিবে, আয় আল্লাহ! আমি যাহা কিছু পড়িলাম ইহাতে যাহাকিছু ছওয়াব হইবে তাহা তুমি অনুগ্রহ করিয়া অমুককে পৌঁছাইয়া দাও। ৪র্থ তরীকা এই, আল্লাহর কাছে এইরূপ দো’আ করিবে যে, আয় আল্লাহ্! অমুকের গোনাহ মাফ করিয়া দাও, আয় আল্লাহ্! অমুককে কবর আযাব হইতে বাঁচাইয়া রাখ, অমুকের আখেরাতের মুশকিল আসান করিয়া দাও ইত্যাদি।
[কোরআন শরীফ খতমকারীগণ যদি ওজরত (মজুরী বা পারিশ্রমিক) লইয়া পড়ে, তবে তাহাতে ছওয়াব হয় না। এইরূপ আখেরাতের ছওয়াবের যে কোন কাজ হউক না কেন, তাহাতে যদি দুনিয়ার ওজরত লওয়া হয়; তবে তাহাতে ছওয়াব হইবে না। কিন্তু পাঠক যদি খালেছ নিয়্যতে আল্লাহর ওয়াস্তে পড়ে-পয়সা বা খাওয়া না পাইলে অসন্তুষ্ট না হয় এবং দাতা খালেছ নিয়্যতে দান করে, তবে দ্বিগুণ ছওয়াব হইবে। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ নিয়্যত দুরুস্ত করা চাই। আল্লাহর কালাম বেচিয়া খাওয়ার চেয়ে খারাব কাজ আর নাই। আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে শরা-মোতাবেক কিছু ছওয়াব রেছানী না করা অতি অন্যায়। নামের জন্য ধুমধাম করিয়া যিয়াফত করা আরও অন্যায়।] - অনুবাদক

No comments:

Powered by Blogger.