সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ যিকির,দুআ,তওবা ও ইসতিগফার
পরিচ্ছেদঃ ১. আল্লাহ্ তা'আলার যিকিরের প্রতি অনুপ্রেরণা প্রদান
৬৫৬১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারণা অনুযায়ী। যখন সে আমার যিকর করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী (তার মনে মনে) স্মরণ করলে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে কোন মজলিসে আমার যিকর (স্মরণ) করে তাহলে আমি তাকে তাদের চাইতে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী (অগ্রসর) হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি।
৬৫৬২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে "যদি সে আমর দিকে এক হাত নিকটবর্তী হয় তাহলে আমি তার দিকে এক 'বাগ' নিকটবর্তী হই ..." কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৫৬৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এইগুলি আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস। এরপর তিনি কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন কোন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তখন আমি তার পানে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যখন সে একহাত আগায় তখন আমি এক 'বাগ' আগাই। যখন সে এক 'বাগ' এগিয়ে আসে তখন আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি।
৬৫৬৪. উমায়্যা ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করতে করতে জুমদান নামক একটি পাহাড়ের নিকটে গেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা এই জুমদান পর্বতে পরিভ্রমণ করতে থাক। এ হল জুমাদান (পর্বত) আজ তা 'মুফাররিদরা' অগ্রবর্তী হয়ে গেল। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, 'মুফাররিদ' কারা, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ অধিক যিকরকারী ও অধিক যিকরকারিণী।
পরিচ্ছেদঃ ২. আল্লাহর নামসমুহ ও তার সংরক্ষণকারীর ফযীলত
৬৫৬৫. আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তার হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তাআলা বেজোড়। তিনি বেজোড় পছন্দ করেন।
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) এর বর্ননায় مَنْ حَفِظَهَا (হিফাযত করে) এর স্থলে مَنْ أَحْصَاهَا (যে সংরক্ষণ করে) উল্লেখ আছে।
৬৫৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি অর্থাৎ এক কম একশটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাম্মাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এইটুকু বর্ধিত করে বলেছেন যে, তিনি (আল্লাহ্) বেজোড় এবং তিনি বেজোড় ভালবাসেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দু'আ করা এবং এরূপ বলবে না যে, (আল্লাহ্) তুমি যদি চাও
৬৫৬৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন দুআ করবে তখন দৃঢ় আস্থার সাথে দু’আ করবে। আর সে যেন "হে আল্লাহ! যদি আপনি চান তাহলে আমাকে দান করুন" না বলে। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নেই।
৬৫৬৮. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমদের কেউ যখন দুআ করে তখন সে যেন না বলে اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ (হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করুন)। বরং সে যেন মযবুতভাবে দৃঢ়তার সাথে দুআ করে। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে যা দান করেন তা তাঁর কাছে বিরাট কিছু নয়।
৬৫৬৯. ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো না বলে যে, اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ (হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমার প্রতি দয়া বর্ষণ করুন)। সে যেন অবশ্যই দৃঢ় সংকল্পের সাথে দুআ করে। কেননা, আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করতে পারেন। তাকে বল প্রয়োগকারী কেউ নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪. কোন বিপদ-সংকট আপতিত হলে মৃত্যু কামনা করা মাকরূহ
৬৫৭০. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বিপদাক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি অগত্যা মৃত্যু কামনা করতেই হয় তাহলে সে যেন বলে- "হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষন পর্যন্ত আমার হায়াত আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়। আর আমাকে মৃত্যু দান করুন যদি আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয়।"
৬৫৭১. ইবনু আবূ খালফ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ (তার উপর পতিত বিপদের কারণে) এর স্থলে مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ (যে বিপদ তার উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে) বলেছেন।
৬৫৭২. হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) ... নাযর ইবনু আনাস ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আনাস (রাঃ) তখন জীবিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যূ কামনা করবে না” না বলতেন তাহলে অবশ্যই আমি মৃত্যূ কামনা করতাম।
৬৫৭৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি তার পেটে সাতটি (লোহা পোড়ার) দাগ দেখিয়েছিলেন। তখন তিনি বললেন, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যূর জন্য দু'আ করতে নিষেধ না করতেন তাহলে অবশ্যই আমি তার জন্য দু'আ করতাম।
৬৫৭৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... অন্য সুত্রে ইবনু নুমায়র, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৫৭৫. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এই মর্মে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে যেন তার জন্য দু'আ না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির বয়স দীর্ঘায়িত হলে এতে তার কল্যাণই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. যারা আল্লাহর দীদার পছন্দ করে আল্লাহ্ তাদের সাক্ষাৎ পছন্দ করেন আর যারা আল্লাহর দীদার অপছন্দ করে আল্লাহ্ তাদের সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন
৬৫৭৬. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।
৬৫৭৭. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৫৭৮. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রুযযী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! এর দ্বারা কি মৃত্যুর অপছন্দনীয়তা উদ্দেশ্য? তাকে তো আমরা সবাই অপছন্দ করি?
তিনি বলেন, বিষয়টি এরূপ নয়। তবে যখন একজন মুমিনকে আল্লাহর রহমত, তার রিযামন্দি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যখন কাফিরকে আল্লাহর আযাব ও তার অসন্তুষ্টির খবর দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।
৬৫৭৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৫৮০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। আর মূত্যু তো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্বে সংঘটিত হয়।
৬৫৮১. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি প্রায়ই ইবন হানী (রহঃ) কে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ... তার অনুরূপ।
৬৫৮২. সাঈদ ইবনু আমর আশআসী (রহঃ) ... শুরায়হ ইবন হানী (রহঃ) সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। তিনি (শুরায়হ) বলেন, এরপর আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। যদি বিষয়টি এরূপ হয় তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি।
তখন তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মত যে ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে, সে বস্তুতই ধ্বংস হয়েছে। বিষয়টি কী? (রাবী) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। অথচ আমাদের মাঝে এমন কেউ নেই, যে মৃত্যুকে অপছন্দ করে না।
তখন তিনি (আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথাই বলেছেন। তবে তুমি যা বুঝেছ ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। প্রকৃতপক্ষে যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে, শ্বাস বক্ষে আটকে যাবে, শরীর শিউরে উঠবে এবং আংগুলগুলো সংকুচিত টানটান হয়ে যাবে তখন (ঐ মুহূর্তে) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করবে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করবেন এবং সে সময় যে আল্লাহর সাক্ষাহু অপছন্দ করবে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করবেন।
৬৫৮৩. ইসহাক হানযালী (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে এ সনদে পূর্ব বর্ণিত আবসার (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৫৮৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. যিকর, দু'আ, আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা এবং তার (আল্লাহর) প্রতি সুধারনা পোষণের ফযীলত
৬৫৮৫. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা আমাকে যে রূপ ধারণা করে আমি (তার জন্য তেমিনই)। আর আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে ডাকে।
৬৫৮৬. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ইবনু উসমান আবদী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ যখন আমার বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে তখন আমি তার দিকে এক 'বাগ'* এগিয়ে আসি। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।
৬৫৮৭. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) ... মু'তামির (রহঃ) তার পিতার সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি তার বর্ণনায় إِذَا أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً (যখন সে পায়ে হেটে আসে) উল্লেখ করেননি।
৬৫৮৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারনা অনুযায়ী থাকি। যখন সে আমার যিকর (আমাকে স্মরণ) করে তখন আমি তার সঙ্গী হয়ে যাই। যখন সে একাকী (মনে মনে) আমার যিকির করে তখন আমি একাকী তাকে স্মরণ করি। যখন সে কোন মজলিসে আমার যিকর করে তখন আমি তাকে তার চাইতে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক বাম (সাড়ে তিন হাত) এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে পায়ে হেটে আস আমি তার দিকে ছুটে আসি।
৬৫৮৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে দশগুন সাওয়াব; আর আমি তাকে আরও বাড়িয়ে দেব। অ্যর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ (গুনাহ) করবে তার প্রতিফল সেই কাজের অনুরূপ কিংবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর (নিকটবর্তী) হয় আমি তার দিকে একহাত এগিয়ে আসি। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি একহাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক বাম এগিয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে হেঁটে আসে আমি তার দিকে ছুটে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে পৃথিবী সমান গুনাহ করে এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করেনি আমি তার সঙ্গে অনুরূপ পৃথিবীতুল্য মাগফিরাত নিয়ে মিলিত হই।
ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, হাসান ইবনু বিশর (রহঃ) ওয়াকী (রহঃ) সুত্রে ... অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৫৯০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আ'মাশ সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে পার্থক্য এই যে, তিনি বলেছেন, তার জন্য রয়েছে দশগুন সাওয়াব অথবা আমি আরও বাড়িয়ে দেব।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দুনিয়াতে শাস্তি ত্বরান্বিত (অগ্রিম) করার দু'আ করা মাকরূহ
৬৫৯১. আবুল খাত্তাব যিয়াদ ইবনু ইয়াহইয়া হাসসানী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মুসলিমকে তার অসুস্থ অবস্থায় দেখার জন্য গেলেন। সে অসুখে কাতর হয়ে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি কোন দুআ করছিলে কিংবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু কামনা করছিলে? সে বললঃ হ্যাঁ। আমি বলছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি আখিরাতে আমাকে যে শাস্তি দিবেন তা এই দুনিয়াতেই ত্বরান্বিত করে দিন।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন শক্তি নেই যে, তা বহন করবে? অথবা (বললেন) তুমি তা বরদাশত করতে পারবে না। তুমি এরূপ বললে না কেন? হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দিন দুনিয়াতে এবং কল্যাণ দান করুন আখিরাতে। আর জাহান্নাম থেকে আমাদের নাজাত দিন।
তিনি (রাবী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন। আর আল্লাহ তাকে নিরাময় দান করেন।
৬৫৯২. আসিম ইবনু নাযর তায়মী (রহঃ) ... হুমায়দ (রহঃ) এবং জাহান্নাম থেকে আমাদের বাচান’ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। এর বর্ধিত অংশ তিনি উল্লেখ করেননি।
৬৫৯৩. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক সাহাবীর অসুখে দেখতে যান। সে ভীষণ কাতর হয়ে পড়েছিল। হুমায়দের হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেন। তবে (তার বর্ণনায়) তিনি বলেছেন, 'আল্লাহর আযাব বরদাশত করার মত শক্তি তোমার নেই' আর এরপর তিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন এবং 'তিনি তাকে নিরাময় করেন' কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি।
৬৫৯৪. মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৮. যিকিরের মজলিসের ফযীলত
৬৫৯৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার একদল ভ্রাম্যমান বিশেষ ফিরিশতা আছে। তারা যিকরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করে বেড়ায়। তাঁরা যখন কোন যিকরের মজলিস পায় তখন সেখানে তাদের (যিকরকারীরদের) সঙ্গে বসে যায়। আর তারা একে অপরকে তাদের পাখা বিস্তার করে বেষ্টন করে নেয়। এমনিভাবে তাঁরা তাদের ও নিকটবর্তী আসমানের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে ফেলে। যিকরকারীরা যখন আলাদা হয়ে যায় তখন তাঁরা আসমানে আরোহণ করে। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কোথা হতে এসেছ? অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত।
তখন তারা বলতে থাকেন, আমরা যমীনে অবস্থানকারী আপনার বান্দাদের নিকট থেকে এসেছি, যারা আপনার তাসবীহ পাঠ করে, তাকবীর পাঠ করে, (তাহলীল পাঠ করে) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর যিকর করে, আপনার প্রশংসা ঘোষণা করে আর আপনার কাছে তাদের (কাঙ্খিত বস্তু) কামনা করে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দারা আমার কাছে কি চায়? তারা বলেন, তারা আপনার কাছে আপনার জান্নাত কামনা করে। তিনি বলেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তাঁরা বলেন, না; হে আমাদের প্রতিপালক! তিনি বলেন, যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত (তাহলে কী করত)? তাঁরা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত। তিনি বলেন, কিসের থেকে তারা আমার কাছে পানাহ চাইত? তাঁরা বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না; তারা দেখেননি।
তিনি বলেন, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতে পেত (তাহলে কী করত)? তারা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে মাগফিরাত কামনা করত। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তারা যা চাইছিল আমি তা তাদের দান করলাম। আর তারা যা থেকে আশ্রয় চাইছিল আমি তা থেকে তাদের নাজাত দিলাম। এরপর তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে তো অমুক গোনাহগার বান্দা ছিল, যে তাদের (যিকিরীনদের) সঙ্গে মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বসেছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। তারা তো এমন একটি সম্প্রদায় যাদের সঙ্গে উপবেশনকারী ব্যক্তি দুর্ভাগা হতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. হে আল্লাহ্! আমাদের কল্যাণ দান করুন দুনিয়াতে এবং কল্যাণ দান করুন আখিরাতে আর জাহান্নাম থেকে আমাদের নাজাত দিন - এ দু'আর ফযীলত
৬৫৯৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাতাদা আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দু'আ দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক দু'আ করতেন? তিনি বললেন, তিনি যে দু'আ দ্বারা অধিক দুআ করতেন তা এই যে, তিনি বলতেনঃ "হে আল্লাহ! আমাদের দান করুন দুনিয়ায় কল্যাণ এবং পরকালে কল্যাণ। আর আমাদের রক্ষা কর জাহান্নামের আযাব থেকে।"
রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) যখন কোন দু’আ করার ইচ্ছা করতেন তিনি এই দুআ (পাঠ) করতেন। যখন তিনি কোন কিছুর ব্যাপারে দুআ করার ইচ্ছা করতেন তখনও এই দুআ পড়তেন।
৬৫৯৭. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন (এই দুআ পাঠ করতেনঃ) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কল্যাণ দান করুন পার্থিব জীবনে, কল্যাণ দান করুন আখিরাতে। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তাহলীল (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলা), তাসবীহ (سُبْحَانَ اللَّه বলা) ও দু'আর ফযীলত
৬৫৯৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই; তিনই সবকিছু উপর ক্ষমতাবান) এই দুআ দিনে একশ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম আযাদ করার সাওয়াব পাবে, তার আমল নামায় একশ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার থেকে একশ গোনাহ মুছে দেওয়া হবে। আর তা ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান (তার কুমন্ত্রণা) থেকে তার জন্য রক্ষাকবচ হয়ে যায়। সেদিন সে যা করেছে তার চেয়ে উত্তম পুণ্য সম্পাদনকারী কেউ হবে না। কিন্তু কেউ তার বেশী আমল করলে তার কথা ভিন্ন।
আর যে ব্যক্তি দিনে একশ' বার سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ (আমি আল্লাহর সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করছি) পাঠ করবে, তার যাবতীয় গোনাহ মোচন করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমতুল্য হয়।
৬৫৯৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ (আল্লাহ পবিত্র ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই) একশ' বার পাঠ করে কিয়ামতের দিনে তার চেয়ে উত্তম আমল কেউ আসবে না। তবে সে ছাড়া, যে ব্যক্তি তদানুরূপ আমল করে কিংবা তার চেয়ে আরও বেশী আমল করে।
৬৬০০. সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ আবূ আইউব গায়লানী (রহঃ) ... আমর ইবনু মায়মুন (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দশবার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব (সার্বভৌম ক্ষমতা) তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই, তিনি-ই সব কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান” পাঠ করবে সে যেন ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর বংশের চারজন গোলামকে মুক্তি দান করল।
সূলায়মান (রহঃ) রাবী ইবনু খাছায়ম (রহঃ) এর সুত্রে অনুরূপ বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কার নিকট থেকে তা শুনেছেন? তিনি বললেন, আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) থেকে। তিনি বলেন, তখন আমি আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) এর কাছে গেলাম এবং বললাম, আপনি কার নিকট থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৬৬০১. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ বাজালী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি কালেমা জিহ্বার উপর (উচ্চারণে) খুবই হালকা, মীযানের (পাল্লায়) অত্যান্ত ভারী, রাহমান (পরম দয়ালু আল্লাহ) এর কাছে খুবই প্রিয়। তা হলোঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ (আমি আল্লাহ তা'আলার জন্য সপ্রশংসা পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, আমি মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি)।
৬৬০২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আমার এ (বাক্যে) বলা- سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান) পাঠ করা আমার অধিক পছন্দনীয় সে সব জিনিসের চাইতে, যার উপর সূর্য উদিত হয়।
৬৬০৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলবে-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ
"আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আল্লাহ মহান, সর্বাপেক্ষা মহান, আল্লাহরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই, তিনি পরাক্রমশালী জ্ঞানবান।"
সে বলল, এই সব তো আমার প্রতিপালকের জন্য। আমার জন্য কি? তিনি বললেন, বল,
للَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত নসীব করুন এবং আমাকে রিযক দান করুন।
মূসা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি (عَافِنِي) আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুনও বলেছেন। তবে আমার তা সঠিক মনে নেই। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তার হাদীসে মূসা (রহঃ) এর এ উক্তি উল্লেখ করেননি।
৬৬০৪. আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... আবূ মালিক আশজায়ী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই দুআ শিক্ষা দিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
"হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।"
৬৬০৫. সাঈদ ইবনু আযহার ওয়াসিতী (রহঃ) ... আবূ মালিক আশজাঈ (রহঃ) পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করত তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাত শিক্ষা দিতেন। এরপর তাকে এই কালেমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমাকে হিদায়াত দান করুন, আমাকে রোগমুক্ত করে দিন এবং আমার জীবিকা দান করুন।
৬৬০৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ মালিক (রাঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যখন আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব তখন কিভাবে তা ব্যক্ত করব? তিনি বললেন, তুমি বল, اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي (হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।) আর (দু'আ করার সময়) বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত সব আংশুল একত্র করবে। (তিনি বললেন) এই শব্দগুলো তোমার দুনিয়া ও আখিরাতকে একত্র করে দেবে।
৬৬০৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? তিনি বললেনঃ যে একশ'বার তাসবীহ (سبحان الله ) পাঠ করলে তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে (অথবা) এবং তার থেকে এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওযা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১১. কুরআন তিলওয়াত ও যিকিরের জন্য সমাবেশের ফযীলত
৬৬০৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা হামদানী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভুত করবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোন মূসলমানের ক্রটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ক্রটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষন তার ভাই এর সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষন তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন।
যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘর সমূহের কোন একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। রহমতের (শামিয়ানা) তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফিরিশতাগণ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নৈকট্যধারীদের (ফিরিশতাগণের) মাঝে তাদের স্মরণ (আলোচনা) করেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেবে তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবেনা।
৬৬০৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ...... আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। আবূ উসামার হাদীসে (একটু পার্থক্য আছে) (তার হাদীসে) “অভাবগ্রস্তের অভাব লাঘব করার” উল্লেখ নেই।
৬৬১০. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আগার্র আবূ মুসলিম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সাক্ষ্য দিয়েছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায় আল্লাহ তা'আলার যিকর করতে বসলে একদল ফিরিশতা তাদের পরিবেষ্টন করে নেন এবং রহমত তাদের উপর আচ্ছাদন হয়ে যায়। আর তাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তার কাছের ফিরিশতাগণের মাঝে তাদের আলোচনা করেন।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... শু’বা থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৬১১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) মসজিদে একটি 'হালকা'য় আসলেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাদের এখানে বসিয়েছে (তোমরা এখানে বসেছ কেন)? তারা বলল, আমরা আল্লাহর যিকর করতে বসেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া আর কিছু তোমাদের বসায়নি? (তোমরা কি শুধু এই জন্যই বসেছ?) তারা বলল, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের বসায়নি। তিনি বললেন, আমি তোমাদের প্রতি (মিথ্যার) সন্দেহ পোষণ (করে তা নিরসনের সে উদ্দেশ্যে) কসম করতে বলিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৃষ্টিতে আমার যে মর্যাদা ছিল সে অনুযায়ী আমার চেয়ে কম হাদীস বর্ণনাকারী কেউ নেই।
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের একটি “হলকায়” যোগ দিয়ে বললেন, কিসে তোমাদের বসিয়েছে? তারা বলল, আমরা বসেছি আল্লাহর যিকর ও তার প্রশংসা করার জন্য। যেহেতু তিনি আমাদের ইসলামের দিকে পরিচালিত করেছেন এবং আমাদের উপর তিনি তার অনুগ্রহ করেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের কি কেবল এটই বসিয়েছে? তারা বলল, আল্লাহর কসম! শুধুমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই আমাদের বসিয়েছে। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের প্রতি মিথ্যার সন্দেহ পোষণ (করে তা দূর করার উদ্দেশ্যে) তোমাদের কসম করতে বলিনি; বরং আমার কাছে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসেছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাগণের কাছে তোমাদের নিয়ে গর্ব প্রকাশ করছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. অধিক পরিমানে ইস্তিগফারের ফযীলত
৬৬১২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ রাবী আতাকী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আগার্র মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ক্বলবে (কখনো কখনো) আবরণ পড়ে যায়, তাই আমি প্রতিদিন একশ বার ইসতিগফার পাঠ করে থাকি।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. তাওবার বর্ণনা
৬৬১৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ বুরদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আগার্র (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশ' বার তাওবা করে থাকি।
৬৬১৪. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৬১৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ সাঈদ আশাজ্জ, আবূ খায়সামা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. আস্তে যিকির করা মুস্তাহাব
৬৬১৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। তখন লোকেরা জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রাণের প্রতি সদয় হও। কেননা, তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছ এমন এক সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী এবং তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।
আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তার পিছনে ছিলাম। তখন আমি বললাম, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজের দিকে উদ্যোগী হওয়ার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই)
তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের কোন একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? তখন আমি বললাম, নিশ্চয়ই ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তুমি বল, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজের দিকে উদ্যোগী হওয়ার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই)
৬৬১৭. ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আসিম সুত্রে এই সনদে তার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৬১৮. আবূ কামিল, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা (সাহাবীগণ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন এবং তারা তখন একটি পার্বত্য ঘাঁটিতে (মোড়ে) আরোহণ করছিলেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি যখনই কোন টিলার উপর উঠত তখন উচ্চস্বরে لاَ إِلَهَ إِلاَ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ 'আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান' বলত। তিনি (রাবী) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো নিশ্চয়ই কোন বধির কিংবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। তিনি বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে একটি কালেমা বাতলে দেব, যা জান্নাতের ভাণ্ডার (তুল্য)। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সেটা কি? তিনি বললেনঃ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ 'আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরে থাকার সাধ্য নেই।'
৬৬১৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। এরপর তিনি তার (পূর্ববর্তী হাদীসের) অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬৬২০. খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ রাবী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। কোন এক যুদ্ধে আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলম। ...... এরপর তিনি আসিমের হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬৬২১. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক যুদ্ধে ছিলাম। ...... এরপর তিনি পুরো হাদীস উল্লেখ করেন। তিনি তার বর্ণনায় বলেছেন, "তোমরা যাকে ডাকছ তিনি তোমাদের বাহনের (উটের) গর্দানের চাইতেও নিকটতর।" তবে তার হাদীসে لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ প্রসঙ্গের উল্লেখ নেই।
৬৬২২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ আমি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি কালেমার কথা বাতলে দেব না? অথবা তিনি বলেছেনঃ জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভাণ্ডার সম্পর্কে বলব না? তখন আমি বললামঃহ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই)।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. (আল্লাহর কাছে) ফিতনা ও দুর্যোগের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
৬৬২৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) সুত্রে আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিক্ষা দিন, যা আমি আমার সালাতে পড়ব। তিনি বললেনঃ তুমি বল,
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَبِيرًا - وَقَالَ قُتَيْبَةُ كَثِيرًا - وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
(হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর (সাংঘাতিক) বড় রকমের যুলুম করেছি। কুতায়বা (রহঃ) বলেন, অত্যধিক (জুলুম)। আপনি ব্যতীত কেউ গোনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপনি আপনার তরফ থেকে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।)
আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূল খায়ের (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ'স (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিক্ষা দিন যার দ্বারা আমি আমার সালাতে ও ঘরে দুআ করতে পারি। এরপর তিনি লায়সের হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি ظُلْمًا كَثِيرًا 'অনেক জুলুম' উল্লেখ করেছেন।
৬৬২৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সব দুআ করতেনঃ (দু'আর অর্থঃ) "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই, জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের ফিতনা, কবরের সংকট, কবর আযাব ও ধন-সম্পদের ফিতনা এবং দারিদ্রের ফিতনার অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অশুভ পরিণতি থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমার পাপরাশি বরফ ও ঠাণ্ডা পানি দ্বারা ধুয়ে সাফ করে দিন। আমার কলব পরিস্কার করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা থেকে সাফ করে দেন। আমি ও আমার পাপরাশির মধ্যে ব্যবধান করে দিন যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, পাপ ও ধার-কর্জ থেকে পানাহ চাই।"
৬৬২৫. আবূ কুবায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. অক্ষমতা ও অলসতা ইত্যাদি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
৬৬২৬. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরষতা, বার্ধক্য, কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাচ্ছি কবর আযাব, জীবন ও মৃত্যুর দুর্যোগের অনিষ্ট থেকে।
৬৬২৭. আবূ কামিল ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ... পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে ইয়াযীদের হাদীসে ‘র্জীবন ও মৃত্যুর দুর্যোগের অনিষ্ট হতে' কথাটির উল্লেখ নেই।
৬৬২৮. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি আশ্রয় চেয়েছেন বর্ণিত বস্তুসমূহ থেকে এবং কৃপণতা হতে।
৬৬২৯. আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআসমূহ দ্বারা দু'আ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْكَسَلِ وَأَرْذَلِ الْعُمُرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃপণতা, অলসতা, বয়সের নিকৃষ্টতম সময় (বার্ধক্যের দৈন্য), কবর আযাব এবং জীবন ও মৃত্যুর দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চাই।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. মন্দ অবস্থা, দুর্ভাগ্যের প্রকোপ ইত্যাদি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
৬৬৩০. আমর নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় চাইতেন অদৃষ্টের মন্দ অবস্থা থেকে, পাপের প্রাবাল্য থেকে, দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে এবং বিপদের কঠিন সংকট থেকে। আমর তাঁর হাদীসে বলেছেন যে, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি সন্দেহ পোষণ করছি, এর থেকে একটি বাড়িয়ে বলতে।
৬৬৩১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... খাওলা বিনত হাকীম সুলায়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মনযিলে অবতরন করে বলবে, أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ "আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালাম দ্বারা তার কাছে তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।" সে ঐ মানযিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৬৬৩২. হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) ... সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) সুত্রে খাওহল বিনত হাকীম সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মনযিলে অবস্থান করে তখন সে যেন বলে (এই দুআ পাঠ করে) "আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালাম দ্বারা তাঁর কাছে তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।" এতে সে ব্যক্তি এ মনযিল থেকে অন্যত্র রুওনা হওয়া অবধি কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।
ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, কা'কা ইবনু হাকীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গত রাতে একটি বিচ্ছু আমাকে দংশন কারণে আমি বড় কষ্ট পাচ্ছি। তিনি বললেনঃ যদি তুমি সন্ধ্যায় এই দুআটি পাঠ করতে أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ তাহলে সে তোমাকে কষ্ট দিতে পারত না।
৬৬৩৩. ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল এবং বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে একটি বিচ্ছু দংশন করেছে। ...... এরপর ইবনু ওহাবের হাদীসের অনুরূপ।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. নিদ্রা ও বিছানায় শোওয়ার সময় দু'আ
৬৬৩৪. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... বারা' ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণ করবে তখন সালাতের ন্যায় তুমি অযু করে নেবে। এরপর ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়বে। এরপর তুমি বল,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ وَاجْعَلْهُنَّ مِنْ آخِرِ كَلاَمِكَ فَإِنْ مُتَّ مِنْ لَيْلَتِكَ مُتَّ وَأَنْتَ عَلَى الْفِطْرَةِ " . قَالَ فَرَدَّدْتُهُنَّ لأَسْتَذْكِرَهُنَّ فَقُلْتُ آمَنْتُ بِرَسُولِكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
অর্থঃ "হে আল্লাহ! আমি আমার মুখমন্ডল আপনার দিকে সোপর্দ করলাম, আমার কাজ-কর্ম আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমি পূরস্কার লাভের আশায় এবং শাস্তির ভয়ে আমার পিঠ আপনার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম (আপনার উপর ভরসা করলাম)। আপনার ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও মুক্তির স্থান নেই। আপনার যে কিতাব নাযিল করেছন তার উপর ঈমান আনলাম, আপনার যে নাবীকে প্রেরণ করেছ তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম।"
আর এই বাক্যগুলোকে তোমার শেষ কথা বানিয়ে নাও। এরপর যদি তুমি এই রাতে ইন্তেকাল কর তাহলে তুমি ইসলামের উপরই ইন্তেকাল করলে। বারাআ (রাঃ) বলেন, আমি এই বাক্যগুলো স্মরণে রাখার জন্য পুনর্বার পড়লাম। তখন আমি বললাম, آمَنْتُ بِرَسُولِكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ (আমি আপনার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছি যাকে আপনি রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন)। অর্থাৎ তোমার نَبِيِّكَ স্থলে رَسُولِكَ বললাম। তিনি বললেন, তুমি বল, آمَنْتُ بِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ (আমি ঈমান এনেছি আপনার নাবীর প্রতি যাকে আপনি পাঠিয়েছেন)।
৬৬৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) সুত্রে থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি মানসুর বর্ণিত হাদীসটি পরিপূর্ণ। সা’দ ইবনু উবায়দা হুসায়নের হাদীসে 'যদি তার সকাল হয় তাহলে সে কল্যাণ লাভ করবে’ কথাটি অধিক উল্লেখ করেছেন।
৬৬৩৫. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) সুত্রে থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি মানসুর বর্ণিত হাদীসটি পরিপূর্ণ। সা’দ ইবনু উবায়দা হুসায়নের হাদীসে 'যদি তার সকাল হয় তাহলে সে কল্যাণ লাভ করবে’ কথাটি অধিক উল্লেখ করেছেন।
৬৬৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন রাতে শয্যা গ্রহণের সময় সে বলেঃ
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِرَسُولِكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার জীবন আপনার কাছে সঁপে দিলাম। আমার মুখমন্ডল আপনার প্রতি ফিরালাম। আমার পিঠ আপনার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম, (পুরস্কার লাভের) আশায় ও (আযাবের) ভয়ে; আপনার (অসন্তুষ্টি) হতে আপনারই কাছে ব্যতীত কোন ঠিকানা ও আশ্রয় নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনার কিতাবের প্রতি যা আপনি নাযিল করেছেন এবং রাসূলের প্রতি যাকে আপনি পাঠিয়েছেন।
এরপর যদি সে ঐ রাতে ইন্তেকাল করে তাহলে ইসলামের উপরই ইন্তেকাল করেছে বলে গণ্য হবে। ইবনু বাশশার (রহঃ) তার হাদীসে مِنَ اللَّيْلِ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৬৬৩৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেনঃ হে অমুক! যখন তুমি তোমার শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করবে ...... এরপর আমর ইবনু মুররা বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে (পার্থক্য এই যে), তিনি বলেছেন, وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ (এবং আপনার সেই নাবীর প্রতি, যাকে আপনি পাঠিয়েছেন)। যদি তুমি রাতে মারা যাও তাহলে ইসলামের উপরই মারা গেলে। যদি ভোর বেলায় উঠ তাহলে তুমি কল্যাণ লাভ করবে।
৬৬৩৮. ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা' ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন ...... এরপর তার অনুরূপ। তবে তিনি “যদি তুমি ভোর বেলায় উঠ তাহলে তোমার কল্যাণ হবে” কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৬৩৯. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা-গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেন, اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَحْيَا وَبِاسْمِكَ أَمُوتُ "হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই জীবিত আছি আর তোমার নামেই মৃত্যূবরণ করছি।"
আর যখন তিনি নিদ্রা থেকে উঠতেন তখন বলতেনঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ "সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবন দান করেছেন। আর তার দিকেই প্রত্যাবর্তন।"
৬৬৪০. উকবা ইবনু মুকরাম আম্মী ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, যখন শয্যাগ্রহণ করবে তখন বলবে,
اللَّهُمَّ خَلَقْتَ نَفْسِي وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا وَإِنْ أَمَتَّهَا فَاغْفِرْ لَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ
হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রাণ সৃষ্টি করেছ এবং তুমিই তার মৃত্যুদানকারী। তোমার জন্য তার (নফসের) জীবন ও মৃত্যু। যদি তুমি একে জীবিত রাখ তাহলে এর হিফাযত কর। আর যদি তুমি এর মৃত্যু ঘটাও তাহলে একে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুস্থতা কামনা করছি।
তখন সে তাকে বলল, আপনি কি তা উমার (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, উমারের চাইতে যিনি উত্তম (অর্থাৎ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। ইবনু নাফি (রহঃ) তার বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বলেছেন। তিনি سَمِعْتُ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৬৬৪১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সালিহ (রহঃ) আমাদিগকে নির্দেশ দিতেন, যখন আমাদের কেউ নিদ্রায় যায় সে যেন ডান কাত হয়ে শয্যা গ্রহণ করে। এরপর সে বলবে,
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ وَرَبَّ الأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَىْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَىْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَىْءٌ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ
হে আল্লাহ! আপনি আসমান, যমীন ও মহান আরশের প্রতিপালক। আমাদের প্রতিপালক ও সব কিছুর পালনকর্তা। আপনি বীজ ও উদ্ভিদের সৃষ্টিকর্তা, আপনি তাওরাত, ইনজীল ও ফুরকানের অবতীর্ণকারী। আমি আপনার কাছে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, আপনি তার মস্তক ধারনকারী (নিয়ন্ত্রণকারী)। হে আল্লাহ! আপনই আদি, আপনার পূর্বে কোন কিছুর (অস্তিত্ব) নেই এবং আপনই অন্ত, আপনার পরে কোন কিছু নেই। আপনই যাহির, আপনার ঊর্ধ্বে কেউ নেই। আপনই বাতিন, আপনার অগোচরে কিছু নেই। আমাদের ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং দারিদ্র্য থেকে আমাদের অভাবমুক্ত করে দিন।
তিনি (আবূ সালিহ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করতেন।
৬৬৪২. আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান ওয়াসেতী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ দিতেন যে, যখন আমরা শয্যাগ্রহণ করি তখন যেন আমরা বলি ... এরপর জারীরের হাদীসের অনুরূপ। আর তিনি বলেছেনঃ সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে যাদের মস্তক ধারনকারী (নিয়ন্ত্রণকর্তা) আপনই।
৬৬৪৩. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে একজন খাদিম চাইলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি বল, اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ “সাত আসমানের মালিক হে আল্লাহ! ...... “(তারপর) সুহায়লের পিতা থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৬৬৪৪. ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার আশ্রয় নেয়, তখন সে যেন তার কাপড়ের আচল দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয় এবং বিসমিল্লাহ পড়ে নেয়। কেননা সে জানেনা যে, শয্যা ত্যাগ করার পর তার বিছানায় কি আছে। এরপর যখন সে শয়ন করবে তখন যেন ডান কাতে শয়ন করে। এরপর সে যেন বলে,
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبِّي بِكَ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
হে আমার প্রতিপালক! আপনি পবিত্র। আপনার নামেই আমি আমার পার্শ্ব (পাঁজর) রাখলাম, আপনার নামেই তা উঠাব। আপনি যদি আমার প্রান বায়ু নিভিয়ে দেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি আপনি তাকে উঠবার অবকাশ দেন তাহলে তাকে হিফাযত করুন, যেমন আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।
৬৬৪৫. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ এরপর সে যেন বলে "হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম। যদি তুমি আমার প্রাণ জীবিত রাখ তাহলে তার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ কর।"
৬৬৪৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَآوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لاَ كَافِيَ لَهُ وَلاَ مُئْوِيَ
"সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের আহার দিয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন, তিনি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অনেক আছে যাদের জন্য কোন পৃষ্ঠপোষক নেই, আশ্রয় দাতাও নেই।"
পরিচ্ছেদঃ ১৯. কৃত আমল ও না করা আমলের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাওয়া
৬৬৪৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ফারওয়া ইবনু নাওফাল আশজা'ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে কি কি দুআ করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সে সব কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই যা আমি আমল করেছি এবং আমি যা করিনি তা থেকে”।
৬৬৪৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... ফারওয়া ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু'আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ
للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَشَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সে সব কর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি।
৬৬৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার, মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (রহঃ) ... হুসায়ন (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ননা করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু জাফরের হাদীসে রয়েছে وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
৬৬৫০. আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর দুআয় বলতেনঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَشَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই সে সব আমলের অনিষ্ট থেকে, যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি (তার অনিষ্ট থেকেও)।
৬৬৫১. হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِعِزَّتِكَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَنْ تُضِلَّنِي أَنْتَ الْحَىُّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ يَمُوتُونَ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করছি, আপনার প্রতই ঈমান এনেছি, আপনার উপরই ভরসা করছি, আপনার দিকেই ধাবিত হয়েছি এবং আপনার সাহায্যেই (দুশমনের বিরুদ্ধে) লড়ছি। হে আল্লাহ! আপনার ইজ্জতের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি আপনার ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আপনার আমাকে পথ ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন।আপনার চিরঞ্জীব সত্তা, যার মৃত্যূ নেই। আর জ্বীন্ন ও মানব জাতি মারা যাবেই।
৬৬৫২. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে থাকতেন তখন ভোর রাতে বলতেন,
سَمَّعَ سَامِعٌ بِحَمْدِ اللَّهِ وَحُسْنِ بَلاَئِهِ عَلَيْنَا رَبَّنَا صَاحِبْنَا وَأَفْضِلْ عَلَيْنَا عَائِذًا بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ
শ্রোতা শ্রবন করুন আল্লাহর প্রশংসা আমাদের জন্য তার উত্তম দান বখশিশ, কল্যাণ বয়ে এনেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের সঙ্গী হন। আমাদের উপর ফযল ও করম কর। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নাম থেকে।
৬৬৫৩. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আম্বারী (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) তাঁর পিতার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি এই দু’আ দ্বারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي جِدِّي وَهَزْلِي وَخَطَئِي وَعَمْدِي وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ, আমার মূর্খতা ও আমার কাজের সীমালংঘন এবং যে বিষয়ে আপনি আমার চাইতে অধিক জানেন তা ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন আমার উদ্দেশ্যমূলক ও উদ্দেশ্যহীন অপরাধ এবং আমার ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সব রকমের অপরাধ (যা আমি করেছি)। হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দিন যা আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি। আর আপনি আমার চাইতে আমার বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনিই অগ্রবর্তী এবং আপনিই পরবর্তী। আপনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
৬৬৫৪. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬৬৫৫. ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَاىَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ
হে আল্লাহ! আপনি আমার দ্বীন ইসলাহ (পরিশুদ্ধ) করে দিন, যে দ্বীনে আমার রক্ষাকবচ। আপনি সংশোধন করে দিন আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার জীবিকা (রয়েছে), আপনি ইসলাহ (কল্যানকর) করে দিন আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন (করতে হবে)। আপনি আমার জীবনকে দীর্ঘায়িত করে দিন প্রত্যেকটি কল্যাণময় কাজের জন্য এবং আপনি আমার মৃত্যু কে আরামদায়ক বানিয়ে দিন সব মন্দ থেকে।
৬৬৫৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি এই বলে দু’আ করতেনঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, নিষ্কলুষতা ওসচ্চলতার জন্য প্রার্থনা করছি।"
৬৬৫৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু ইসহাক (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে (পার্থক্য এইটুকু যে), ইবনু মুসান্না তার বর্ণনায় (الْعَفَافَ এর স্থলে) الْعِفَّةَ (হারাম থেকে ও চারিত্রিক পবিত্রতা) উল্লেখ করেছেন।
৬৬৫৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... যাযিদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে তেমনই বলব যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
"হে আল্লাহ! আমি আপনার কছে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনার আমার নফসে (অন্তর) তাকওয়া দান করুন এবং একে পরিশুদ্ধ করে দিন। আপনি একে সর্বোত্তম পরিশোধনকারী, আপনিই এর মালিক ও এর অভিবাবক। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অনুপকারী ইলম থেকে ও ভয় ভীতিহীন কলব থেকে; অতৃপ্ত নফস থেকে ও এমন দুআ থেকে যা কবুল হয় না।"
৬৬৫৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধ্যা হত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ
“আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সন্ধ্যায় পৌছেছে। সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তার শরীক নেই।”
হাসান (রহঃ) বলেন, আমাকে যুবায়দ (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবরাহীম (রহঃ) থেকে এ বিষয়ে মুখস্ত করেছেনঃ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ
"রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তারই, তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ রাতের কল্যাণ কামনা করি এবং এ রাতের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই এবং এর পরবর্তী (রাত) থেকেও। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা থেকে ও বার্ধক্যের মন্দ অবস্থা (অহংকারের অনিষ্ট) থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে এবং কবরের আযাব থেকে।"
৬৬৬০. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধ্যা হত তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ "আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সন্ধ্যায় পৌছেছে। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তার শরীক নেই।"
রাবী মনে করেন যে, তিনি তার দুআর মধ্যে বলেছেন, "রাজত্ব তারই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনিই সব কিছু উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে কল্যাণ চাই এই রাতের এবং তার পরবর্তী রাতেরও। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এই রাতের অনিষ্ট থেকে এবং এর পরবর্তী রাতের অনিষ্ট থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা, বার্ধক্যের (অহংকারের) মন্দ পরিণাম থেকে। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই জাহান্নাম ও কবর আযাব থেকে।"
আর যখন সকাল হতো, তিনি বলতেনঃ "আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সকালে পৌঁছেছে।"
৬৬৬১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধা হতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْهَرَمِ وَسُوءِ الْكِبَرِ وَفِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ
“আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং রাজ্য অল্লোহর জন্য সন্ধ্যয় পৌছেছে। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই। আল্লাহ ব্যাতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক (সত্তা) তার শরীক নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণ চাই এই রাতের ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার (কল্যাণ) এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এই রাতের ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা, বার্ধক্য, অহংকারের অনিষ্ট, দুনিয়ার ফিতনা ও কবর আযাব থেকে।”
হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, যুবায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে মারফূ সনদে অধিক বলেছেন। তিনি বলেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
“আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক (সত্তা), তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনই সকল কিছু উপর সর্বশক্তিমান।”
৬৬৬২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَعَزَّ جُنْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَغَلَبَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ فَلاَ شَىْءَ بَعْدَهُ “আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তিনি তার বাহিনীকে শক্তিমত্তা দিয়েছেন এবং তাঁর বান্দাকে সাহায্যে করেছেন। আর তিনি একাই (কাফির) সকল বাহিনীর উপর বিজয়ী হয়েছেন। তাঁরপরে আর কোন কিছু নেই।”
৬৬৬৩. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি বলঃ اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدِّدْنِي وَاذْكُرْ بِالْهُدَى “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান কর, আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর।” তিনি আমাকে আরও বলেছেন, (এ দু'আর সময়) هِدَايَتَكَ الطَّرِيقَ وَالسَّدَادِ سَدَادَ السَّهْمِ তোমার সোজা রাস্তায় চলার মত হিদায়াত এবং তীর সোজা করার মত সঠিকতার সাথে তুমি স্মরণ করবে।”
৬৬৬৪. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আসিম ইবনু কুলায়ব (রহঃ) এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এভাবে বলতে বলেছেনঃ "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত ও সঠিকতা কামনা করছি।" এরপর তিনি তার অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০. দিনের প্রথম ভাগে ও শোওয়ার সময় তাসবীহ পাঠ
৬৬৬৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমর নাকিদ, ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যূষে তাঁর নিকট থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন তখন তিনি সালাতের জায়গায় ছিলেন। এরপর তিনি দুহা’র পরে ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্থায়ই আছ। তিনি বললেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করলে এই কালেমা চারটির ওযনই বেশী হবে। কালেমাগুলো এই-
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
"আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি তার অগণিত সৃষ্টির সমান, তার সন্তুষ্টি, তার আরশের ওযনের পরিমাণ ও তার কালেমার (কালির) সংখ্যার পরিমাণ।"
৬৬৬৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক (রহঃ) ... জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফজরের সালাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন অথবা ফজরের সালাতের পরে আসলেন। এরপর বর্ণনাকারী তার (পূর্ববর্তী রিওয়ায়াতের) অনুরূপ উল্লেখ করেন। তবে (এতে পার্থক্য এই যে), তিনি বলেছেন, سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ "আমি আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি তাঁর সৃষ্টির পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ এবং তার কালেমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।"
৬৬৬৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) যাতা পিষতে গিয়ে তাঁর হাতে ব্যথা পেলেন। তিনি একটি খাদিম চাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। কিন্তু তিনি এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলেন না। তিনি আয়িশা (রাঃ) এর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আয়িশা (রাঃ) তার কাছে ফাতিমা (রাঃ) এর আগমনের বিষয় জানালেন।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা আমাদের শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা আমাদের শয্যা থেকে উঠতে চাইলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের জায়গায় থাক। এরপর তিনি আমাদের সামনে বসলেন। তখন আমি তাঁর কদম মুবারকের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিক্ষা দেব না, যা তোমরা চেয়েছিলে তার চাইতে উত্তম? যখন তোমরা তোমাদের শয্যা গ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবার' ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ' এবং ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' পড়বে। এটি তোমাদের জন্য খাদিমের চাইতে উত্তম।
৬৬৬৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শু'বা সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে মুআযের হাদীসে مِنَ اللَّيْلِ (রাতে) শব্দটি অধিক উল্লেখ আছে।
৬৬৬৯. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও উবায়দ ইবনু ইয়াঈশ (রহঃ) ... আলী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) সুত্রে হাকামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি [হাকাম (রহঃ)] হাদীসে এইটুকু বাড়িয়ে বলেছেন যে, আলী (রাঃ) বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনার পর থেকে কখনো আমি তা ছাড়িনি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, সিফফীনের রাতেও নয়? তিনি বললেন, সিফফীনের রাতেও নয়। ইবনু আবূ লায়লা সূত্রে আতা বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেন, আমি তাকে বললাম, সিফফীনের রাতেও কি ছেড়ে দেননি?
৬৬৭০. উমায়্যা ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রাঃ) একজন খাদিমের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং কাজের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেনঃ তবে আমি কি তোমাকে এমন কিছুর কথা বলবনা, যা তোমার খাদিম থেকে উত্তম? তা হল রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তুমি ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।
আহমাদ ইবনু সাঈদ দারিমী (রহঃ) ... সুহায়ল (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২১. মোরগ ডাকার সময় দু'আ করা মুস্তাহাব
৬৬৭১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ চাইবে। কেননা সে ফিরিশতা দেখেছ। আর যখন তোমরা গাধার বিকট আওয়ায শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইবে। কেননা সে শয়তান দেখেছে।
পরিচ্ছেদঃ ২২. কঠিন মুসীবতের (সময়ের) দু'আ
৬৬৭২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন বিপদের সময় বলতেনঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
"মহান, সহনশীল আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। আরশের অধিপতি মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আসমানের রব ও যমীনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।"
৬৬৭৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর মু’আয ইবনু হিশামের হাদীস অধিক পূর্ণাঙ্গ।
৬৬৭৪. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করতেন এবং কঠিন বিপদের সময় এইগুলো বলতেন। এরপর তিনি কাতাদা সূত্রে মূআয ইবনু হিশামের হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। এই বর্ণনায় رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ স্থলে رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ আছে।
৬৬৭৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যখন কোন কঠিন সংকট আগত হত তখন তিনি বলতেন ...... এরপর তিনি মুআযের পিতার বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন এবং এর সাথে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ 'মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই' অধিক উল্লেখ করেছেন।
৬৬৭৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল কোন কালাম সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা তার ফিরিশতা অথবা (বললেন) তার বান্দাদের জন্য যে কালাম পছন্দ করেছেন, তা হল, سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ (আমি আল্লাহর সপ্রশংস ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি)।
৬৬৭৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যার! আমি কি তোমাকে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম বাতলে দেব না? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় কালামটি আপনি আমাকে বাতলে দিন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম হল, سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ "আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি।"
পরিচ্ছেদঃ ২৩. মুসলমানদের জন্য তাদের অনুপস্থিতিতে দু'আর ফযীলত
৬৬৭৮. আহমাদ ইবনু উমর ইবনু হাফস ওয়াকী (রহঃ) ... আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান বান্দা তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু’আ করলে একজন ফিরিশতা তার জবাবে বলে "আর তোমার জন্যও অনুরূপ"।
৬৬৭৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উম্মু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনিব (স্বামী) আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করে, তার জন্য একজন নিয়োজিত ফিরিশতা আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তোমার জন্যও অনুরূপ।
৬৬৮০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উম্মু দারদা (রাঃ) এর স্বামী সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে গেলাম এবং সেখানে আবূ দারদা (রাঃ) এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে আমাদের কল্যাণের জন্য দুআ করবেন। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ একজন মুসলমান বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথায় একজন ফিরিশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য দু’আ করে তখন নিয়োজিত ফিরিশতা বলে থাকে আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরুপ। তিনি বলেন, এরপর আমি বাজারের দিকে বের হলাম। আর আবূ দারদা (রাঃ) এর দেখা পেলাম, তখন তিনি আমাকে তার অনুরূপ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করলেন।
৬৬৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল মালিক ইবনু আবূ সুলায়মান থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) এর সুত্রে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. পানাহারের পর الحمد لله বলা মুস্তাহাব
৬৬৮২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সেই বন্দার প্রতি সন্তুষ্ট, যে খাওয়ার পরে তার জন্য الحمد لله বলে এবং পানীয় পান করার পরে তার জন্য (শুকরিয়া স্বরূপ) الحمد لله বলে।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... যাকারিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অনুরুপ বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. দু'আকারী "আমি কত দু'আ করলাম কিন্তু কবুল হল না" এরূপ উক্তি করে তাড়াহুড়া না করলে তার দু'আ কবুল হয়
৬৬৮৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারোর দু'আ তখনই কবুল করা হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। (তাড়াহুড়া করে দুআ করার পর) এরূপ না বলতো বলতে থাকে যে, আমি আমার প্রতিপালকের সকাশে দুআ করলাম; অথচ তিনি আমার দুআ কবুল করছেনন না অথবা (বললেন) কবুল করা হয় নি।
৬৬৮৪. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারোর দুআ তখনই কবুল করা হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। এভাবে বলতে না থাকে যে, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে দুআ করলাম তিনি আমার দুআ কবুল করলেন না।
৬৬৮৫. আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দুআ হরহামেশা কবুল করা হয় যদি না সে পাপ কর্মের জন্য কিংবা আত্নীয়তার সম্পর্কে ছিন্ন করার জন্য দুআ করে এবং (দু'আয়) তাড়াহুড়া না করে। বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (দু’আয়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তূ তা কবুল হল বলে দেখতে পেলাম না। তখন সে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দুআ করা ছেড়ে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. জান্নাতবাসী অধিকাংশই দরিদ্র এবং জাহান্নামবাসী অধিকাংশই নারী এবং নারী সম্পর্কিত ফিতনার বর্ণনা
৬৬৮৬. হাদ্দাব ইবনু খালিদ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। দেখলাম, অধিকাংশই যারা জান্নাতে প্রবেশ করছে, মিসকীন আর সম্পদশালীরা বন্দী অবস্থায়। যারা জাহান্নামী তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। আমি জাহান্নামের প্রবেশ পথে দাঁড়ালাম। দেখলাম যে, অধিকাংশই যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, নারী।
৬৬৮৭. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে দৃষ্টি দিলাম, দেখতে পেলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই ফকীর। এরপর আমি জাহান্নামের দিকে তাকালাম, দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী।
৬৬৮৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
৬৬৮৯. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন। এরপর আইউব (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
৬৬৯০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবু রাজা' (রহঃ) সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ...... এরপর সাঈদ (রহঃ) তার (পূর্বোক্তের) অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
৬৬৯১. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... আবূ তায়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ এর দুই স্ত্রী ছিল। তিনি একদা তাদের একজনের কাছ থেকে এলেন। তখন অন্য জন বলল, আপনি তো অমুকের নিকট থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) এর কাছে থকে এসেছি। তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের অল্প সংখ্যক অধিবাসী নারী সমাজ।
৬৬৯২. মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ) ... আবূ তায়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুতাররিফকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তার দু'জন স্ত্রী ছিল ......। মুআযের হাদীসের মর্মের অনুরূপ।
৬৬৯৩. উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল করীম আবূ যুরআ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এইঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, তোমার নিয়ামত সরে যাওয়া, তোমার ক্ষমা ওলটপালট হয়ে যাওয়া, তোমার আকস্মিক প্রতিশোধ এবং তোমার সব রকমের অসন্তুষ্টি থেকে।
৬৬৯৪. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার (ওফাতের) পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।
৬৬৯৫. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিসা ও সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি আমার (ওফাতের) পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি।
৬৬৯৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সুলায়মান তায়মী থেকে এই সনদে তার অনুরূপ বর্ণিত।
৬৬৯৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দুনিয়া মিষ্ট সবুজ (সুস্বাদু দর্শনীয় ও) আল্লাহ তা'আলা সেখানে তোমাদের খলীফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি দেখতে চান যে, তোমরা কি কর? তোমরা দুনিয়া ও নারী থেকে সাবধান থাক। কেননা বনী ইসরাঈলদের মধ্যে যে প্রথম ফিতনা দেখা দিয়েছিল তা ছিল নারীকে কেন্দ্র করে।
ইবনু বাশশার (রহঃ) বর্নিত হাদীসে فَيَنْظُر এর স্থলে لِيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ (তোমরা কি কর তা দেখার জন্য তিনি তোমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন)।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. গুহাবাসী তিন ব্যক্তির কিসসা এবং নেক আমলের ওয়াসীলা দিয়ে দু'আ করা
৬৬৯৮. মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মুসায়্যাবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা তিন ব্যক্তি পথে হেঁটে চলছিল। পথে তাদের উপর বৃষ্টি নামল। তখন তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। তখন পর্বতগাত্র থেকে একটি পাথর খন্ড খসে তাদের গুহার মুখে গড়িয়ে পড়ল। ফলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, আপন আপন নেক আমলের প্রতি লক্ষ্য কর, যা তোমরা আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য করেছ এবং সেই নেক আমলের ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাক। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।
তখন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতামাতা ছিলেন অতিশয়র বৃদ্ধ। আমার একজন স্ত্রী ও ছোট ছোট সন্তানাদি ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্য বকরী মাঠে চরাতাম। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এসে আমি সেগুলোর দুধ দোহন করতাম এবং আমি আমার পুত্র কন্যাদের আগে প্রথমেই আমার পিতামাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন একটি গাছ আমাকে দুরে নিয়ে গেল (অর্থাৎ চারণভূমি দুরে ছিল)। এতে আমার ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমি তাদের (পিতামাতা) উভয়কে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম। এরপর আমি পূর্বের মতই দুধ দোহন করলাম। আমি দুধ নিয়ে আমার পিতামাতার মাথার কাছে দাড়িয়ে রইলাম এবং তাদের নিদ্রা ভঙ্গ করা পছন্দ করলাম না এবং তাদের আগে সন্তানদের দুধ পান করানোও পছন্দ করলাম না। তখন আমার সন্তানরা পিপাসায় আমার দুই পায়ের কাছে কাতরাচ্ছিল। তাদের ও আমার এই অবস্থা চলল। অবশেষে ভোর হয়ে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি এই কাজ আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি, তাহলে আমাদের জন্য এতে পাথরে একটা ফোঁকড় করে দিন, যদ্বারা আমরা আসমান দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তা’আলা তাতে একটি ফাঁক করে দিলেন। তা দিয়ে তারা আসমান দেখতে পেল।
আরেক জন বলল, হে আল্লাহ! আমার ঘটনা এই, আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষ যেভাবে নারীকে প্রচণ্ডরূপে ভালবাসে আমি তাকে তেমন ভালবাসতাম। আমি তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। সে তাতে অস্বীকৃতি জানাল এবং একশ দীনার বায়না ধরল। আমি চেষ্টা করে একশ দীনার সঞ্চয় করলাম। এরপর সেগুলো নিয়ে তার কাছে গেলাম। যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে ছিপি খুলো না (কুমারিত্ব নষ্ট করো না)। একথা শুনে আমি তার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আপনি যদি জানেন যে, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এ কাজ করেছি তাহলে আমাদের জন্য একটি ফোঁকড় করে দিন। তখন তিনি তাদের জন্য আরেকটু ফাঁক করে দিলেন।
অপর ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক চালের (শস্যের) একজন মজুর নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ সমাধা করে তার প্রাপ্য মজুরী দাবী করল। আমি এক ফারাক (শস্য) তার সামনে পেশ করলাম। কিন্তু সে তা নিলনা। আমি সে শস্য যমীনে চাষ করতে থাকলাম। পরিশেষে তা দিয়ে গরু-বকরী ও রাখাল সংগ্রহ করলাম। পরে সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর। আর আমার প্রাপ্য পরিশোধের ব্যাপারে আমার উপর যুলুম করো না। আমি বললাম, তুমি এই গরু ও রাখালের কাছে গিয়ে সেগুলো নিয়ে যাও। তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার সঙ্গে ঠাট্রা-মশকরা করো না। আমি বললাম আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্রা করছি না। ঐ গরু ও তার রাখালদের নিয়ে যাও। তখন সে তা নিয়ে চলে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি একাজটি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি তাহলে অবশিষ্ট অংশ খুলে দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা গুহা মুখের অবশিষ্ট অংশ খুলে দিলেন।
৬৬৯৯. ইসহাক ইবনু মানসূর ও আবদ ইবনু হুমায়দ, সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ বাজালী যুহায়র ইবনু হারব, হাসান হুলওয়ানী, আবদ ইবনু হুমায়দ ... সকলে ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) সুত্রের আবূ যামরা (রহঃ) এর হাদীসের মর্ম অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন।
তাঁরা তাঁদের হাদীসের এইটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন خَرَجُوا يَمْشُونَ তারা হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে গেল। সালিহ (রহঃ) এর হাদীসে يَتَمَاشَوْنَ শব্দ আছে। উবায়দুল্লাহর হাদীসে خَرَجُوا (তারা বের হলো) উল্লেখ আছে। এরপর তিনি কোন শব্দ উল্লেখ করেননি।
৬৭০০. মুহাম্মাদ ইবন সাহল তামীমী, আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান ইবন বাহরাম, আবু বাকর ইবন ইসহাক (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্বেকার যুগের তিন ব্যক্তি পথ চলছিল। অবশেষে রাত যাপন (এর প্রয়োজনে) তারা এক গুহায় আশ্রয় নিল ...... ইবন উমর (রাঃ) থেকে নাফি (রহঃ) এর বর্ণিত হাদিসের মর্মানুসারে বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি (রাবী) বলেছেন “তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ্ আমার ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধ পিতামাতা। আমি পরিবার পরিজনের কাউকেই তাদের আগে বিরোলের (বারাদ্ধ পানীয়) দুধ পান করাতাম না।
এবং অন্য (দ্বিতীয়) একজন বলেছেন সে (চাচাতো বোন) আমার হাতে আত্মরক্ষা করল। অবশেষে সে (কোন এক) দুর্ভিক্ষের শিকার হল। তখন সে আমার কাছে এলে আমি তাকে একশত বিশ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম এবং (তৃতীয়) একজন বলেছেন, আমি তার (প্রাপ্য) মুজুরী উৎপাদনে বিনিয়োগ করলাম। অবশেষে তাতে সম্পদ (উট, গরু, ছাগল) অনেক ভাল হল এবং তা (এত অধিক হল যে, তা) নড়াচড়া ও ছুটাছুটি করতে লাগল। ... এতে রাবী বলেছেন, তারা হাঁটতে হাঁটতে গুহা থেকে বেরিয়ে গেল।
No comments: