Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ শপথ ও মানত অধ্যায় ২ (৬২১১-৬২৫০)

 হাদিস ৬২১১

আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আরয করল যে, আমি তো প্রস্তর নিক্ষেপের পূর্বে যিয়ারত করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। আরেক ব্যাক্তি বলল, আমি তো যবেহ করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। অপর ব্যাক্তি বলল, আমি তো প্রস্তর নিক্ষেপের পূর্বে যবেহ করে ফেলেছি! তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই।

হাদিস ৬২১২

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক কোণে অবস্হান করছিলেন। লোকটি তাঁর কাছে এসে তাকে সালাম করল। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। কেননা, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি। তখন সে ফিরে গেল এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। পুনরায় এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমার উপরও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। কেননা, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি। তৃতীয়বার লোকটি বলল, দয়া করে আমাকে অবহিত করে দিন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ) দণ্ডায়মান হবে তখন খুব ভালভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নেবে। এরপর কিবলা মুখী হবে। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলবে। এরপর কুরআন মজীদ থেকে যা তোমার জন্য সহজ তিলাওয়াত করবে। এরপর ধীরস্হিরভাবে রুকু করবে। এরপর মাথা উত্তোলন করবে। এমনকি সঠিকভাবে দাড়িয়ে যাবে। এরপর সিজদা করবে ধীরস্হিরভাবে। এরুপর (সিজদা থেকে) মাথা উত্তোলন করবেঃ এমন কি সোজা হয়ে এবং ধীরস্হিরভাবে বসে যাবে। এরপর পূনরায় সিজদা করবে ধীরস্হিরভাবে। তারপর সিজদা থেকে মাথা উত্তোলন করবে। এমন কি সোজা হয়ে দাড়িয়ে যাবে। এরপর তোমার সমস্ত সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করবে।

হাদিস ৬২১৩

ফারওয়া ইবনু আবূল মাগরা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উহুদের যূদ্ধে মুশরিকরা প্রকাণ্ডভাবে পরাজয় বরণ করে। ইবলিস চিৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দ্বারা! তোমরা পিছনের দিকে ফির। এতে সামনের লোকগুলো পিছনের দিকে ফিরল। তারপর পিছনের লোকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হুযায়ফা ইবনু ইয়ামন (রাঃ) আকমিক তার পিতাকে দেখে মুসলমানদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ এ তো আমার পিতা, আমার পিতা। আল্লাহর কসম! তারা ফিরল না। পরিশেষে তারা তাকে হত্যা করল। হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। উরওয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর কসম! মৃত্যু পর্যন্ত হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিকট তার পিতার মৃত্যুটি মানসপটে বিদ্যমান ছিল।

হাদিস ৬২১৪

ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সায়িম ভুলক্রমে কিছু আহার করে সে যেন তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ন করে। কেননা, আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।

হাদিস ৬২১৫

আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। প্রথম দুরাকাআতের পর না বসে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলে লোকেরা তার সালামের অপেক্ষা করছিল। তিনি আল্লাহু আকবার বলে সালামের পূর্বে সিজদা করলেন। এরপর মাথা উত্তলোন করলেন। আবার আল্লাহু আকবার বলে সিজদা করলেন। এরপর আবার মাথা উত্তোলন করলেন এবং সালাম ফিরালেন।

হাদিস ৬২১৬

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাদের নিয়ে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কিছু অধিক করলেন অথবা কিছু কম করলেন। মানসুর বলেন! এই কম-বেশির ব্যাপারে সন্দেহ ইবরাহীমের না আলকামার তা আমার জানানেই। রাবী বলেন আরয করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত (নামায/নামাজ)-এর মাঝে কি কিছু কমিয়ে দেয়া হয়েছে না আপনি ভুলে গিয়েছেন? তিনি বললেনঃ কি হয়েছে? সাহাবাগণ বললেনঃ আপনি এভাবে এভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। রাবী বলেন- তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দুটি সিজদা করেন। এরপর বললেনঃ এ দুটি সিজদা ঐ ব্যাক্তির জন্য যার স্বরণ নেই যে, সালাত (নামায/নামাজ) সে কি বেশি কিছু করেছে, না কম করেছে। এমন অবস্থায় সে চিন্তা করবে (প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করবে)। আর যা বাকি থাকবে তা পুরা করে নেবে! এরপর দু টি সিজদা আদায় করবে।

হাদিস ৬২১৭

আল হুমায়দী (রহঃ) উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আল্লাহর বাণীঃ “মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না” ও আমার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। “ সম্পর্কে শুনেছেন। তিনি বলেছেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রথমবারের (প্রশ্ন উত্থাপনটা) ভুলবশত হয়েছিল। আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার শাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেনঃ হা যে, বারাআ ইবনু আযিব (রহঃ)-এর নিকট কয়েকজন অতিথি ছিল। তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনকে তাঁদের জন্য সালাত (নামায/নামাজ) থেকে প্রত্যাবর্তন করার পূর্যে কিছু যবেহ করতে হুকুম করলেন, যেন ফিরে এসেই তাঁরা আহার করতে পারেন। তখন পরিবারের লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) থেকে প্রত্যাবর্তনের পূব্বেই (কুরবানীর পশু) যবেহ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে লোকেরা এ সম্পর্কে বর্ণনা করল। তিনি পূনরায় যবেহ করার জন্য হুকুম করলেন। বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কাছে এমন একটি বকরীর বাচ্চা আছে যা দুটি বড় বকরীর গোশতের চেয়েও উত্তম। ইবনু আউন শাবীর মাধ্যমে বর্ণনা করতে গিয়ে এ স্থড়ানটিতে থেমে যেতেন। তিনি মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে এর অনুরুপ বর্ণনা করতেন এবং এ স্থানে থেমে যেতেন। আর বলতেন, আমার জানানেই তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য তদ্রূপ অনুমতি আছে কিনা? আইউব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬২১৮

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি (এক ঈদের দিন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) খুতবা প্রদান করলেন। এরপর বললেনঃ যে ব্যাক্তি (সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বেই) যবেহ করে ফেলেছে তার উচিত যেন তার পরিবর্তে আরেকটি যবেহ করে নেয়। আর যে এখনও যবেহ করেনি সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে।

হাদিস ৬২১৯

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কবীরা শোনাহ সমুহের (অন্যতম) হচ্ছে আল্লাহ তাঁআলার সঙ্গে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা। 

 হাদিস ৬২২০

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি যদি কোন মুসলমানের সস্পদ ছিনিয়ে নেয়ার মানসে মিথ্যা কসম করে তবে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তার মুলাকাত হবে এমতাবস্থায় যে, আল্লাহ তার ওপর রাগাম্বিত থাকবেন। আল্লাহ তা-আলা এ কথার সমর্থনে আয়াত ‘ইননাল্লাযিনা ইয়াসতারুনা ’ নাযিল করেন। এরপর আশআছ ইবনু কায়স (রাঃ) প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আবূ আব্দুর রহমান তোমাদের কাছে কি বর্ননা করেছেন? লোকেরা বলল, এরুপ এরুপ। তখন তিনি বললেনঃ এ আয়াত আমার সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছে। আমার চাচাতো ভাই-এর জমিতে আমার একটি কুপ ছিল। আমি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট হাযির হলাম। তিনি বললেনঃ তুমি প্রমাণ উপস্হাপন কর অথবা সে কসম করুক! আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ কথার উপরে সে তো কসম খেয়েই ফেলবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের সস্পদ ছিনিয়ে নেয়ার মানসে কসম করে! অথচ সে তাতে মিথ্যাবাদী তবে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এমতাবস্থায় যে আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন।

হাদিস ৬২২১

মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশ-আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাকে আমার সাথীগণ (একদা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রেরণ করল তাঁর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন কিছুই আরোহণের জন্য দিতে পারব না। তখন আমি তাকে রাগান্বিত অবস্হায় পেলাম। এরপর যখন আমি তার কাছে এলাম, তিনি বললেনঃ তুমি তোমার সঙ্গীদের কাছে চলে যাও এবং বল যে, নিশ্চই আল্লাহ অথবা আল্লাহর রাসুল তোমাদের আরোহণের জন্য বাহনের ব্যবস্হা করবেন।

হাদিস ৬২২২

আবদূল আযীয ও হাজ্জাজ (রহঃ) (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে অপবাদ বর্ণনাকারীরা যা বলেছিল তা শুনতে পেলাম। আলাহ তায়াআলা এ মর্মে তাঁর নিস্কুলষতা প্রকাশ করে দিয়েছেন। উপরোক্ত বর্ণনাকারীগণ প্রত্যেকেই আমার নিকট উল্লিখিত ঘটনার অংশ বিশেষ বর্ণনা করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ যখন আল্লাহ ‘ইন্নাল্লাজ্বীনা যায়ু বিল আফকি’ থেকে দশখানা আয়াত আমার নিস্কুলষতা প্রকাশ করণার্থে নাযিল করেছেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আত্নীয়তার সম্পর্কের কারণে মিসতাহ ইবনু সালামার ভরণ-পোষণ করতেন। অপবাদ প্রদানের কারণে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! মিসতাহ যখন আয়িশার ব্যাপারে অপবাদ রটিয়েছে; এরপর আমি আর তার জন্য কখনও কিছু খরচ করব না। তখন আল্লাহ তা’আলা ‘অলা ইয়াতালি উলুল ’-এ আয়াত নাযিল করেন। আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিন এটা আমি নিশ্চয়ই পছন্দ করি। তিনি পুনরায় মিসতাহের ভরণ-পোষণের জন্য ঐ খরচ দেওয়া শুরু করলেন, যা তিনি পূর্বে তাকে দিতেন এবং তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তার খরচ দেওয়া আর কখনও বন্ধ করব না।

হাদিস ৬২২৩

আবূ মামার (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কতিপয় আশআরী লোকের সঙ্গে (বাহন চাওয়ার জন্য) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলাম। যখন উপস্থিত হলাম, তখন তাকে রাগান্বিত অবস্হায় পেলাম। আমরা তাঁর কাছে বাহন চাইলাম। তিনি কসম করে বললেনঃ যে, আমাদেরকে বাহন দিবেন না। এরপর বললেনঃ আল্লাহর কসম আমি কোন কিছুর ওপর আল্লাহর ইচ্ছা মুতাবিক যখন কসম করি আর তার অন্যটির মাঝে মঙ্গল দেখতে পাই তাহলে যেটা মঙ্গলকর সেটাই করি আর কসমকে ভঙ্গ করে ফেলি।

হাদিস ৬২২৪

আবূল ইয়ামান (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব (রাঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ তালিবের যখন মৃত্যু উপস্থিত হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে তশরীফ আনলেন এবং বললেনঃ আপনি ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কলেমাটি বলুন। আমি আল্লাহ তা-আলার নিকট আপনার ব্যাপারে এর মাধ্যমে সুপারিশ করব।

হাদিস ৬২২৫

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি কলেমা এমন যা জিহবাতে অতি হালকা অথচ মীযানে ভারী আর রাহমানের নিকট খুব পছন্দনীয়; তা হলঃ সূবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি, সূবহানাল্লাহি আযীম।

হাদিস ৬২২৬

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কলেমা বললেনঃ আর আমি বললাম, অন্যটি। তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে মৃত্যু বরন করবে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। আমি অপরটি বললাম, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক না করে মৃত্যৃবরণ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

হাদিস ৬২২৭

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের ব্যাপারে ঈলা (কসম) করলেন। আর তখন তাঁর কদম মুবারক মচকে গিয়েছিল। তিনি তখন উনত্রিশ দিন কুঠরীতে অবস্হান করেছিলেন। এরপর তিনি নেমে এলেন (স্ত্রীগণের কাছে ফিরে এলেন) লোকেরা তখন জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো এক মাসের ঈলা করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ মাস তো কখনও ঊনত্রিশ দিনেও হয়।

হাদিস ৬২২৮

আলী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবূ উসায়দ (রাঃ) বিবাহ করলেন। তার (ওলীমায়)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। আর তখন তার নব বিবাহিতা স্ত্রী তাঁদের খেদমত করছিলেন। সাহল (রাঃ) তার কাওমের লোকদেরকে বললেনঃ তোমরা কি জানো সে মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পান করিয়েছিল? সে রাত্রি বেলা একটি পাত্রে তার জন্য খেজুর ভিজিয়ে রেখেছিল। এমনিভাবে সকাল হয়। আর সেগুলই সে তাঁকে পান করাল।

হাদিস ৬২২৯

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা সাওদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমাদের একটি বকরী মরে গেল। আমরা এর চামড়া দাবাগাত করে নিলাম! এরপর থেকে তাতে সর্বদাই আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য প্রস্তুত করতাম। এমন কি তা পুরাতন হয়ে গেল।

হাদিস ৬২৩০

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ পরিবার তরকারী মিশ্রিত গমের রুটি একাধারে তিনদিন পর্যন্ত খেয়ে পরিতৃপ্ত হননি। এভাবে তিনি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ইবনু কাসীর (রহঃ) আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এই হাদীসটি আয়িশা (রাঃ)-কে বলেছেন।

হাদিস ৬২৩১

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আবূ তালহা (রাঃ) উমে সুলায়ম (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূর্বল আওয়াজ শুনতে পেলাম, যার মাঝে আমি ক্ষুধার আভাষ পেলাম। তোমার কাছে কি কিছু আছে? উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বলল, হ্যা। তখন তিনি কয়েকটি যবের রুটি বের করলেন। এরপর তার ওড়নাটি নিলেন এবং এর কিছু অংশে রুটিগুলি পেঁচিয়ে নিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর তিনি আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আমি গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে পেলাম। এবং কতিপয় লোক তাঁর সঙ্গে রয়েছে। আমি তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে কি আবূ তালহা গাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদেরকে বললেনঃ উঠ (আবূ তালহার কাছে যাও)। তখন তাঁরা আবূ তালহার নিকট চললেন। আমি তাদের আগে আগে যেতে লাগলাম। অবশেষে আবূ তালহার কাছে এসে উপস্থিত হলাম এবং তাকে এ সম্পর্কে খবর দিলাম। তখন আবূ তালহা (রাঃ) বলল, হে উম্মে সুলায়ম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - ই তো আমাদের কাছে তশরীফ এনেছেন অথচ আমাদের নিকট তো এমন কোন খাদ্যই নেই যা তাদের খেতে দিতে পারি। উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বলল, আল্লাহ ও তার রাসুলই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। আবূ তালহা (রাঃ) রেরিয়ে এলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ তালহা (রাঃ) উভয়ই সামনাসামনি হলেন এবং উভয়ই একত্রে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে তাই নিয়ে এসো। তখন উম্মে সুলায়ম (রাঃ) ঐ রুটিগুলি তার সামনে পেশ করলেন। রাবী বলেনঃ এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রুটিগুলি ছিড়ার জন্য হুকুম করলেন। তখন রুটিগুলি টুকরা টুকরা করা হল। উম্মে সুলায়ম (রাঃ) তার ঘি-এর পাত্র থেকে ঘি নিংড়ে বের করলেন এবং তাতে মিশ্রিত করে দিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু পাঠ করলেন এবং বললেনঃ দশজন লোককে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তারা সকলেই আহার করলেন, এমন কি সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে সেখান থকে বের হলেন। এরপর তিনি আবার বললেনঃ (আরও) দশজনকে অনুমতি দাও। তখন তাদরেকে অনূমতি দেয়া হল। এভাবে তারা সকলেই আহার করলেন, এমনকি সবহি পরিতৃপ্ত হয়ে সেখান থেকে বের হলেন। এরপর আবারো তিনি বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে দাও। দলের লোক সংখ্যা ছিল সত্তর বা আশি জন।

হাদিস ৬২৩২

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে নিশ্চয়ই প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা ভার নিয়্যাতের উপয় নির্ভরশীল। কোন ব্যাক্তি তাই লাভ করবে যা সে নিয়্যাত করে থাকে। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্তুটির জন্যই হবে। আর যার হিজরত দুনিয়াকে হাসিলের জন্য হবে অথবা কোন রমনীকে বিয়ে করার জন্য হবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যই হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।

হাদিস ৬২৩৩

আহামাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রাঃ) খেকে বর্ণিত। কাব (রাঃ) যখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তার জনৈক পূত্র তাঁকে ধরে নিয়ে চলতেন। আব্দুর রাহমান বলেনঃ আমি আল্লাহর বানীঃ যে তিনজন তাবুকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত হয়েছে। সংক্রান্ত ঘটনা বর্ণনা করতে কা’ব ইবনু মালিককে শুনেছি। তিনি তার বর্ণনার শেষাংশে বলেনঃ আমার তওবা এটাই যে আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর কাছে দান করে দিয়ে আমি মুক্ত হব। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রাখ এটী তোমার জন্য কল্যানকর হবে। 

 হাদিস ৬২৩৪

হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ)-এর কাছে অবস্হান করছিলেন এবং তার কাছে মধূ পান করেছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি এবং হাফসা (রাঃ) পরস্পরে পরামর্শ করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দু-জনের মধ্যে যার কাছে আগে আসবেন তখন-আমরা তাঁকে এ কথাটি বলবঃ যে, আপনার মুখ থেকে তো মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? এরপর তিনি কোন একজনের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি তাঁকে ঐ কথাটি বললেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, না বরং আমি যায়নাব বিনত জাহাশের কাছে মধূ পান করেছি। এরপরে আর কখনও এ কাজটি করব না। তখনই এ আয়াত নাযিল হলঃ “তোমরা উভয়ে যদি আল্লাহর কাছে তওবা কর”- এখানে সন্মোধন আরেশা ও হাফসা (রাঃ)-এর প্রতি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে কথাকে গোপন করেন। এ আয়াত খানা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা “বরং আমি মধূ পান করেছি”-এর প্রতি ইঙ্গিত করণার্থে নাযিল হয়েছে। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কসম করে ফেলেছি এ কাজটি আমি আর কখনও করব না। তুমি এ ব্যাপারটি কারও কাছে প্রকাশ করো না।

হাদিস ৬২৩৫

ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) সাঈদ ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তোমাদেরকে কি মানত করতে নিষেধ করা হয়নি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেনঃ মানত কোন কিছুকে বিন্দুমাত্র এগিয়ে আনতে পারে না এবং পিছিয়েও দিতে পারে না। তরে হ্যা, মানতের দ্বারা কৃপণের কাছ থেকে (কিছু মাল) বের করা হয়।

হাদিস ৬২৩৬

খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ এতে কিছুই রদ হয় না, কিন্তু কৃপণ থেকে মাল বের করা হয়।

হাদিস ৬২৩৭

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানত মানুষকে এমন বস্তু এনে দিতে পারে না, যা আমি তাকদীরে নির্ধারিত করিনি। বরং মানতটি তাকদীরের মাঝেই - ঢেলে দেয়া হয় যা তার জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। সুতরাং এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা কৃপনের কাছ থেকে মাল বের করে নিয়ে আসেন। আর তাকে এমন কিছু দিয়ে থাকেন যা পূর্বে তাকে দেওয়া হয়নি।

হাদিস ৬২৩৮

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা। করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের-মধ্যে আমার যমানার লোকেরাই সর্বোত্তম, এরপর তাদের পরবর্তী” যমানার লোকেরা, এরপর তাদের পরবর্তী লোকেরা। ইমরান (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যমানা বলার পর দু-বার বলেছেনঃ না কি তিনবার তা আমার স্বরণ নেই। এরপর এমন সব লোকের আবির্ভাব হবে যারা মানত করবে অথচ তা পূর্ন করবে না। তারা খেয়ানত করবে তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তাবা সাক্ষ্য প্রদান করবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলা হবে না। আর তাদের মাঝে হৃষ্টপূষ্টতা প্রকাশিত হবে।

হাদিস ৬২৩৯

আবূ নূয়াঈম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এরুপ মানত করে যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে তাহলে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে এরুপ মানত করে, সে আল্লাহর না ফরমানী করবে তাহলে সে যেন তার নাফরমানী না করে।

হাদিস ৬২৪০

মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল আবূল হাসান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, উমর (রাঃ) একদা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জাহিলী যুগে মানত করেছিলাম যে, মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করব। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মানত পুরা করে নাও।

হাদিস ৬২৪১

আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ মর্মে জানিয়েছেন যে, সা’দ ইবনু উবাদা আনসারী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তার মাতার কোন এক মানত সম্পর্কে, যা আদায় করার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। তহান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার মায়ের পক্ষ থেকে মানত আদায় করে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। আর পরবর্তীতে এটাই সূন্নাত হিসাবে পরিগণিত হল।

হাদিস ৬২৪২

আদম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জনৈক ব্যাক্তি এসে বলল যে, আমার বোন হাজ্জ (হজ্জ) করবে বলে মানত করেছিল। আর সে মারা গিয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার ওপর যদি কোন ঋণ থাকত তরে কি তুমি তা পূরণ করতে না? লোকটি বলল, হ্যা। তিনি বললেনঃ সুতরাং আল্লাহ তা আলার হককে আদায় করে দাও। কেননা, আল্লাহর হক আদায় করাটা তো অধিক কর্তব্য।

হাদিস ৬২৪৩

আবূ আসিম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তার আনুগত্য করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর নাফরমানী করার মানত করে সে যেন তার নাফরমানী না করে।

হাদিস ৬২৪৪

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এ ব্যাক্তিটি যে নিজের জানোকে আযাবের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে নিশ্চয় এতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। আর তিনি লোকটিকে দেখলেন যে, সে তার দূটি পূত্রের মাঝে ভর করে হাঁটছে। ফাযারীও অত্র হাদীসটি আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬২৪৫

আবূ আসিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন। লোকটি একটি রশির অথবা অন্য কিছুর সাহায্যে কাবা শরীফ তাওয়াফ করছে। তিনি সে রশিটি কেটে ফেললেন।

হাদিস ৬২৪৬

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা-বার তাওয়াফ করার সময় এক ব্যাক্তির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি অন্য আরেকজনকে নাকে রশি লাগিয়ে টানছিল (আর সে তাওয়াফ করছিল) এতদৃষ্টে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে তার রশিটি কেটে ফেললেন এবং হুকুম করলেন, যেন তাকে হাতে টেনে নিয়ে যায়।

হাদিস ৬২৪৭

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদান করছিলেন। এক ব্যাক্তিকে দাড়ানো দেখে তার সম্পর্কে লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল যে, এ লোকটির নাম আবূ ইসরাঈল। সে মানত করেছে ষে, দাড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়াতে যাবে না, কারও সঙ্গে কথা বলবে না এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটিকে বলে দাও সে যেন কথা বলে, ছায়াতে যায়, বসে এবং তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সমাপ্ত করে। আবদূল ওয়াহহাব, আইউব ও ইকরামার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অত্র হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬২৪৮

মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমরকে এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে ব্যাক্তি মানত করেছিল যে সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন থেকে কোন দিনই বিরত থাকবে না। আর তার মাঝে কুরবানী বা ঈদূল ফিতরের দিন এসে পড়ল। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে তোমাদের জন্য সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে। তিনি ঈদুল ফিতরের এবং কুরবানীর দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন না। আর তিনি ঐ দিনগুলোর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা জায়েযও মনে করতেন না।

হাদিস ৬২৪৯

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) যিয়াদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন! আমি একবার ইবনু উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক ব্যাক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, আমি মানত করেছিলাম যে, যতদিন আমি বেচে থাকব ততদিন প্রতি মঙ্গলবার এবং বুধবার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব। কিন্তু এর মাঝে কুরবানীর দিন পড়ে গেল। (তখন এর কি হুকুম হবে?) তিনি বললেন! আল্লাহ তাআলা মানত পূরা করার হুকুম করেছেন; এদিকে কুরবানীর দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। লোকটি প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করল। তিনি এরুপই উত্তর দিলেন, এর চেয়ে বেশি কিছু বললেন না।

হাদিস ৬২৫০

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বারের যু-দ্ধের দিন বেরহলাম। আমরা মাল, আসবাবপত্র ও কাপড়-চোপড় ব্যতীত স্বর্ণ বা রৌপ্য গনীমত হিসাবে পাইনি। বনী যুবায়র গোত্রের রিফাআ ইবনু যায়িদ নামক এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটি গোলাম হাদিয়া দিলেন, যার নাম ছিল মিদআম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াদি উল কুরার দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি যখন ওয়াদিউল কুরায় পৌছলেন, তখন মিদআম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওয়ারীর হাওদা থেকে মালপত্রগুলি নামাচ্ছিলেন। তখন অকমিৎ একটি তীর এসে তার গায়ে বিদ্ধ হল এবং তাতে সে মারা গেল। লোকেরা বলল, এ লোকটির জন্য জান্নাতের সূসংবাদ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনও না, কসম ঐ মহান সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! খায়বারের যুদ্ধের দিন গনীমতের মাল থেকে বণ্টনের পুর্বে যে চাঁদরটি সে নিয়ে গিয়েছিল তার গায়ে তা লেলিহান শিখা হয়ে জ্বলবে। এ কথাটি যখন লোকেরা শুনতে পেল, তখন এক ব্যাক্তি একটি বা দুটি ফিতা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে হাযির হল। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে জাহান্নামের একটি ফিতা বা জাহান্নামের দুটি ফিতা। 

No comments:

Powered by Blogger.