আম্মার ইবন ইয়াসির (রা:) এর
আম্মার ইবন ইয়াসির (রা:) এর জীবনী
নাম ‘আম্মার, কুনিয়াত ‘আবুল ইয়াকজান’। পিতা ইয়াসির, মাতা সুমাইয়্যা। পিতা কাহতান বংশের সন্তান। আদি বাসস্থান ইয়ামন। তাঁর এক ভাই হারিয়ে যায়। হারানো ভাইয়ের খোঁজে অন্য দু’ভাই হারিস ওমালিককে সংগে করে তিনি মক্কায় পৌঁছেন। অন্য দু’ভাই ইয়ামন ফিরে গেলেও ইয়াসির একা মক্কায় থেকে যান। মক্কার বনী মাখযুমের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আবু হুজাইফা মাখযুমির ‘সুমাইয়্যা’ নাম্নী এক দাসীকে বিয়ে করেন। এই সুমাইয়্যার গর্ভেই হযরত আম্মার জম্মগ্রহণ করেন। আবু হুজাইফা শিশুকালেই আম্মারকে আযাদ করে দেন এবং আমরণ পিতা-পুত্রের মত দু’জনের সম্পর্ক বজায় রাখেন।
হযরত আম্মার ও হযরত সুহাইব ইবন সিনান দু’জনই একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আম্মার বলেনঃ ‘আমি সুহাইবকে আরকামের বাড়ীর দরযায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘তোমার উদ্দেশ্য কি? সে বললোঃ প্রথমে তোমার উদ্দেশ্য কি তাই বল।’ বললাম, মুহাম্মদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কিছু কথা শুনতে চাই। সে বললো, ‘আমারও সেই একই উদ্দেশ্য।’ তারপর দু’জন একসাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আম্মারের সাথে অথবা কিছু আগে বা পরে তার পিতা ইয়াসিরও ইসলাম গ্রহণ করেন।
হযরত ‘আম্মার ইসলাম গ্রহণ করে দেখলেন, আবু বকর ছাড়া আর পাঁচজন পুরুষ ও দ’জন মহিলা তার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তবে এর অর্থ এই যে, তখন মাত্র এ ক’জনই তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। অন্যথায় সহীহ বর্ণনা মতে আম্মারের পূর্বে তিরিশেরও বেশী সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশ কাফিরদের ভয়ে ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিলেন।
মক্কা হযরত ‘আম্মারের জম্মভূমি নয়। আপন বলতে সেখানে তাঁর কেউ ছিল না। পার্থিব আভিজাত্য বা ক্ষমতার দাপটও তাঁর ছিল না। তাছাড়া তখন পর্যন্ত তাঁর মা ‘সুমাইয়্যা’ বনী মাখযুমের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এমনি এক অবস্থায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ঈমানী জযবায় একদিনও বিষয়টি গোপন রাখতে পারলেন না। সবার কাছে প্রকাশ করে দিলেন। মক্কার মুশরিকরা দুর্বল পেয়ে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের লোকদের ওপর নানা ধরণের নির্যাতন শুরু করে দিল। দুপুরের প্রচন্ড গরমের সময় উত্তপ্ত পাথরের ওপর তাঁকে চিৎ করে শুইয়ে দেয়া হতো, জ্বলন্ত লোহা দিয়ে শরীর ঝলসে দেওয়া হতো। কিন্তু আম্মারের ঈমানী শক্তির কাছে মুশরিকদের সকল অত্যাচার ও উৎপীড়ন পরাজিত হলো।
হযরত আম্মারের মা হযরত সুমাইয়্যাকে নরাধ্ম আবু জাহল নিজের নিযা দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত সুমাইয়্যা প্রথম শহীদ। আম্মারের পিতা ইয়াসির এবং ভাই আবদুল্লাহও মুশরিদের অত্যাচারের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। একদিন মুশরিকরা আম্মারকে আগুনের অঙ্গারের ওপর শুইয়ে দিয়েছে। এমন সময় রাসূল (সা) সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ব্যথিত চিত্তে আম্মারের মাথায় পবিত্র একটি হাত রেখে বললেনঃ ‘হে আগুন, ইব্রাহিমের মত তুই আম্মারের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যা।’ রাসূল (সা) যখনই আম্মার পরিবারের বাড়ীর ধার দিয়ে যেতেন এবং তাদেরকে নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে পেতেন, সান্ত্বনা দিতেন। একদিন তিনি বলেনঃ ‘আম্মার পরিবারের লোকেরা, তোমাদের জন্য সুসংবাদ। জান্নাত তোমাদের জন্য প্রতীক্ষা করছে।’ একবার হযরত আম্মার রাসূলুল্লাহর নিকট এই অসহনীয় যুলম অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিকায়েত করলো। রাসূল (সা) বললেন, ‘সবর কর, সবর কর।’ তারপর দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ, ইয়াসির খান্দানের লোকদের ক্ষমা করে দাও।’
হযরত আম্মার ও হযরত সুহাইব ইবন সিনান দু’জনই একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আম্মার বলেনঃ ‘আমি সুহাইবকে আরকামের বাড়ীর দরযায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘তোমার উদ্দেশ্য কি? সে বললোঃ প্রথমে তোমার উদ্দেশ্য কি তাই বল।’ বললাম, মুহাম্মদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কিছু কথা শুনতে চাই। সে বললো, ‘আমারও সেই একই উদ্দেশ্য।’ তারপর দু’জন একসাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আম্মারের সাথে অথবা কিছু আগে বা পরে তার পিতা ইয়াসিরও ইসলাম গ্রহণ করেন।
হযরত ‘আম্মার ইসলাম গ্রহণ করে দেখলেন, আবু বকর ছাড়া আর পাঁচজন পুরুষ ও দ’জন মহিলা তার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তবে এর অর্থ এই যে, তখন মাত্র এ ক’জনই তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। অন্যথায় সহীহ বর্ণনা মতে আম্মারের পূর্বে তিরিশেরও বেশী সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশ কাফিরদের ভয়ে ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিলেন।
মক্কা হযরত ‘আম্মারের জম্মভূমি নয়। আপন বলতে সেখানে তাঁর কেউ ছিল না। পার্থিব আভিজাত্য বা ক্ষমতার দাপটও তাঁর ছিল না। তাছাড়া তখন পর্যন্ত তাঁর মা ‘সুমাইয়্যা’ বনী মাখযুমের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এমনি এক অবস্থায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ঈমানী জযবায় একদিনও বিষয়টি গোপন রাখতে পারলেন না। সবার কাছে প্রকাশ করে দিলেন। মক্কার মুশরিকরা দুর্বল পেয়ে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের লোকদের ওপর নানা ধরণের নির্যাতন শুরু করে দিল। দুপুরের প্রচন্ড গরমের সময় উত্তপ্ত পাথরের ওপর তাঁকে চিৎ করে শুইয়ে দেয়া হতো, জ্বলন্ত লোহা দিয়ে শরীর ঝলসে দেওয়া হতো। কিন্তু আম্মারের ঈমানী শক্তির কাছে মুশরিকদের সকল অত্যাচার ও উৎপীড়ন পরাজিত হলো।
হযরত আম্মারের মা হযরত সুমাইয়্যাকে নরাধ্ম আবু জাহল নিজের নিযা দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত সুমাইয়্যা প্রথম শহীদ। আম্মারের পিতা ইয়াসির এবং ভাই আবদুল্লাহও মুশরিদের অত্যাচারের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। একদিন মুশরিকরা আম্মারকে আগুনের অঙ্গারের ওপর শুইয়ে দিয়েছে। এমন সময় রাসূল (সা) সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ব্যথিত চিত্তে আম্মারের মাথায় পবিত্র একটি হাত রেখে বললেনঃ ‘হে আগুন, ইব্রাহিমের মত তুই আম্মারের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যা।’ রাসূল (সা) যখনই আম্মার পরিবারের বাড়ীর ধার দিয়ে যেতেন এবং তাদেরকে নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে পেতেন, সান্ত্বনা দিতেন। একদিন তিনি বলেনঃ ‘আম্মার পরিবারের লোকেরা, তোমাদের জন্য সুসংবাদ। জান্নাত তোমাদের জন্য প্রতীক্ষা করছে।’ একবার হযরত আম্মার রাসূলুল্লাহর নিকট এই অসহনীয় যুলম অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিকায়েত করলো। রাসূল (সা) বললেন, ‘সবর কর, সবর কর।’ তারপর দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ, ইয়াসির খান্দানের লোকদের ক্ষমা করে দাও।’
একদিন মুশরিকরা তাঁকে এত দীর্ঘক্ষণ পানিতে ডুবিয়া রাখে যে, তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় শত্রুরা তাঁর মুখ দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে অনুশোচনায় জর্জরিত হতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহর (সা) দরবারে হাজির হলেন। রসূল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আম্মার, খবর কি?’ আম্মার জবাব দিলেনঃ ‘আজ আপনার শানে কিছু খারাপ এবং তাদের উপাস্যদের সম্পর্কে কিছু ভলো কথা না বলা পর্যন্ত আমি মুক্তি পাইনি।’ রাসূল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার অন্তর কি বলছে?’ ‘আমার অন্তর ঈমানে পরিপূর্ণ।’ প্রিয় নবী (সা) অত্যন্ত দরদের সাথে তাঁর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন, ‘কোন ক্ষতি নেই। এমন অবস্থার মুখোমুখি হলে আবারও এমনটি করবে।’ তারপর তিনি সূরা আন নাহালের নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ ‘যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর কুফরী করে, তবে যাদেরকে বাধ্য করা হয় এবং তাদের অন্তর ঈমানের ওপর দৃঢ় (তাদের কোন দোষ নেই)।’ (আন নাহল/১৪)
একবার হযরত সাঈদ ইবন যুবাইর (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসকে (রা) জিজ্ঞেস করেছিলঃ কুরাইশরা কি মুসলমানদের ওপর এতই অত্যাচার চালাতো যে, তারা দ্বীন ত্যাগ করতে বাধ্য হতো? জবাবে তিনি বলেছিল, “আল্লাহর কসম, হাঁ। কুরাইশরা তাদেরকে মারতো, অনাহারে রাখতো। এমন কি তারা এতই দুর্বল হয়ে পড়তো যে, উঠতে বসতে অক্ষম হয়ে যেত। এ অবস্থায় তাদের অন্তরের বিরুদ্ধে স্বীকৃতি আদায় করে নিত। এসব নির্যাতিত মুসলিমদের একজন আম্মার।”
হযরত আম্মার হাবশায় হিজরাত করেছিলেন কিনা সে সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি হাবশাগামী দ্বিতীয় কাফিলার সহগামী হয়েছিলেন। মদীনায় হিজরাতের হুকুম হলে তিনি মদীনায় হিজরত করেন এবং হযরত মুবাশশির ইবনুল মুনযিরের মেহমান হন। রাসূল (সা) হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান আল আনসারীর সাথে তাঁর ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তাঁকে একখন্ড ভূমিও দান করেন।
হিজরাতের ছয়-সাত মাস পর মদীনার মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। রাসূল (সা) নিজেও মসজিদ তৈরীর কাজে অংশগ্রহণ করেন। হযরত আম্মারও সক্রিয়ভাবে মসজিদ তৈরীতে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি মাথায় করে ইট বহন করেছিলেন আর মুখে এই চরণটি আওড়াচ্ছিলেনঃ ‘নাহনুল মুসলিমুন নাবতানিল মাসাজিদ-আমরা মুসলিম, আমরা বানাই মসজিদ।’ হযরত আবু সাঈদ বলেন, আমরা একটি করে ইট উঠাচ্ছিলাম, আর আম্মার উঠাচ্ছিলেন দু’টি করে। একবার আম্মার যাচ্ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) পাশ দিয়ে। রাসুল (সা) অত্যন্ত স্নেহের সাথে তাঁর মাথার ধূলো-বালি ঝেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আফসুস আম্মার ! একটি বিদ্রোহীদল তোমাকে হত্যা করবে।তুমি তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকবে, আর তারা তোমাকে ডাকবে জাহান্নামের দিকে।’ একবার কেউ তাঁর মাথায় এত বোঝা চাপিয়ে দিল যে, লোকেরা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আম্মার মারা যাবে, আম্মার মারা যাবে’ রাসূল (সা) এগিয়ে গিয়ে আম্মারের মাথা থেকে ইট তুলে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলেন।
বদর থেকে তাবুক পর্যন্ত যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, সবগুলিতে আম্মার অংশগ্রহণ করেন। হযরত আবু বকরের (রা) যুগে সংঘটিত অধিকাংশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও তিনি সাহসী যোদ্ধার পরিচয় দেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার বলেন, ‘ইয়ামামার যুদ্ধে আম্মারের একটি কান দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে লাফাতে থাক। তা সত্বেও তিনি বেপরোয়াভাবে হামলার পর হামলা চালাতে থাকেন। যে দিকে তিনি যাচ্ছিলেন, কাফিরদের ব্যুহ তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। একবার মুসলিম বাহিনী প্রায় ছত্রভঙ্গ হবার উপক্রম হলো। আম্মার এক বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝেখানে একটি পাথরের কাছে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকেনঃ ‘ওহে মুসলিম মুজাহিদবৃন্দ! তোমরা কি জান্নাত থেকে পালাচ্ছো? আমি আম্মার ইবন ইয়াসির। এসো, আমার দিকে এসো।’ এই আওয়ায মুসলিম বাহিনীর মধ্যে যাদুর মত কাজ করে তারা আবার রুখে দাঁড়ায়। বিজয় ছিনিয়ে আনে।
হিজরী ২০ সনে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার (রা) তাঁকে কুফার ওয়ালী বা শাসক নিয়োগ করেন। এক বছর নয় মাস অতি দক্ষতার সাথে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় বসরাবাসীরা কিছু নতুন বিজিত এলাকা বসরার সাথে দেওয়ার জন্য খলীফার নিকট দাবী করে। কুফার কিছু নেতৃবৃন্দ তাদের আমির আম্মারকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন উক্ত এলাকা সমূহ কুফার সাথে দেওয়ার ব্যাপারে খলীফাকে সম্মত করেন। কিন্তু হযরত আম্মার এ ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়তে রাজী হলেন না। কুফার নেতারা ক্ষেপে গেলেন। একজন তাকে ‘কান কাটা’ বলে গালিই দিয়ে বসেন। জবাবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আফসুস, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ও উত্তম কানটিকে গালি দিলে, যে কানটি আল্লাহর পথে কাটা গেছে।’
এই বিষয়টি নিয়ে কুফার কিছু নেতৃবৃন্দ তাঁর বিরুদ্ধে শাস্ন কার্যে অদক্ষ বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। খলীফা তাঁকে বরখাস্ত করেন। বরখাস্তের পরের দিন খলীফা ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, সত্য কথাটি বলতে হবে। পূর্বে আমার নিয়োগের সময় খুশী ছিলাম না, তেমনি এখন বরখস্তের সময় নাখোশও নই।’
তৃতীয় খলীফা হযরত উসমানের (রা) খিলাফতকালে চতুর্দিকে যখন বিক্ষোভ ও অসন্তোষ ধুমায়িত হয়ে ওঠে, তখন হিজরী ৩৫ সনে তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য খলীফা একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। হযরত আম্মারও ছিলেন এই কমিশনের অন্যতম সদস্য। বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র মিসরের তদন্তভার তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। তিনি মিসর যান।
একবার হযরত সাঈদ ইবন যুবাইর (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসকে (রা) জিজ্ঞেস করেছিলঃ কুরাইশরা কি মুসলমানদের ওপর এতই অত্যাচার চালাতো যে, তারা দ্বীন ত্যাগ করতে বাধ্য হতো? জবাবে তিনি বলেছিল, “আল্লাহর কসম, হাঁ। কুরাইশরা তাদেরকে মারতো, অনাহারে রাখতো। এমন কি তারা এতই দুর্বল হয়ে পড়তো যে, উঠতে বসতে অক্ষম হয়ে যেত। এ অবস্থায় তাদের অন্তরের বিরুদ্ধে স্বীকৃতি আদায় করে নিত। এসব নির্যাতিত মুসলিমদের একজন আম্মার।”
হযরত আম্মার হাবশায় হিজরাত করেছিলেন কিনা সে সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি হাবশাগামী দ্বিতীয় কাফিলার সহগামী হয়েছিলেন। মদীনায় হিজরাতের হুকুম হলে তিনি মদীনায় হিজরত করেন এবং হযরত মুবাশশির ইবনুল মুনযিরের মেহমান হন। রাসূল (সা) হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান আল আনসারীর সাথে তাঁর ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তাঁকে একখন্ড ভূমিও দান করেন।
হিজরাতের ছয়-সাত মাস পর মদীনার মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। রাসূল (সা) নিজেও মসজিদ তৈরীর কাজে অংশগ্রহণ করেন। হযরত আম্মারও সক্রিয়ভাবে মসজিদ তৈরীতে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি মাথায় করে ইট বহন করেছিলেন আর মুখে এই চরণটি আওড়াচ্ছিলেনঃ ‘নাহনুল মুসলিমুন নাবতানিল মাসাজিদ-আমরা মুসলিম, আমরা বানাই মসজিদ।’ হযরত আবু সাঈদ বলেন, আমরা একটি করে ইট উঠাচ্ছিলাম, আর আম্মার উঠাচ্ছিলেন দু’টি করে। একবার আম্মার যাচ্ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) পাশ দিয়ে। রাসুল (সা) অত্যন্ত স্নেহের সাথে তাঁর মাথার ধূলো-বালি ঝেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আফসুস আম্মার ! একটি বিদ্রোহীদল তোমাকে হত্যা করবে।তুমি তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকবে, আর তারা তোমাকে ডাকবে জাহান্নামের দিকে।’ একবার কেউ তাঁর মাথায় এত বোঝা চাপিয়ে দিল যে, লোকেরা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আম্মার মারা যাবে, আম্মার মারা যাবে’ রাসূল (সা) এগিয়ে গিয়ে আম্মারের মাথা থেকে ইট তুলে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলেন।
বদর থেকে তাবুক পর্যন্ত যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, সবগুলিতে আম্মার অংশগ্রহণ করেন। হযরত আবু বকরের (রা) যুগে সংঘটিত অধিকাংশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও তিনি সাহসী যোদ্ধার পরিচয় দেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার বলেন, ‘ইয়ামামার যুদ্ধে আম্মারের একটি কান দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে লাফাতে থাক। তা সত্বেও তিনি বেপরোয়াভাবে হামলার পর হামলা চালাতে থাকেন। যে দিকে তিনি যাচ্ছিলেন, কাফিরদের ব্যুহ তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। একবার মুসলিম বাহিনী প্রায় ছত্রভঙ্গ হবার উপক্রম হলো। আম্মার এক বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝেখানে একটি পাথরের কাছে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকেনঃ ‘ওহে মুসলিম মুজাহিদবৃন্দ! তোমরা কি জান্নাত থেকে পালাচ্ছো? আমি আম্মার ইবন ইয়াসির। এসো, আমার দিকে এসো।’ এই আওয়ায মুসলিম বাহিনীর মধ্যে যাদুর মত কাজ করে তারা আবার রুখে দাঁড়ায়। বিজয় ছিনিয়ে আনে।
হিজরী ২০ সনে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার (রা) তাঁকে কুফার ওয়ালী বা শাসক নিয়োগ করেন। এক বছর নয় মাস অতি দক্ষতার সাথে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় বসরাবাসীরা কিছু নতুন বিজিত এলাকা বসরার সাথে দেওয়ার জন্য খলীফার নিকট দাবী করে। কুফার কিছু নেতৃবৃন্দ তাদের আমির আম্মারকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন উক্ত এলাকা সমূহ কুফার সাথে দেওয়ার ব্যাপারে খলীফাকে সম্মত করেন। কিন্তু হযরত আম্মার এ ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়তে রাজী হলেন না। কুফার নেতারা ক্ষেপে গেলেন। একজন তাকে ‘কান কাটা’ বলে গালিই দিয়ে বসেন। জবাবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আফসুস, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ও উত্তম কানটিকে গালি দিলে, যে কানটি আল্লাহর পথে কাটা গেছে।’
এই বিষয়টি নিয়ে কুফার কিছু নেতৃবৃন্দ তাঁর বিরুদ্ধে শাস্ন কার্যে অদক্ষ বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। খলীফা তাঁকে বরখাস্ত করেন। বরখাস্তের পরের দিন খলীফা ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, সত্য কথাটি বলতে হবে। পূর্বে আমার নিয়োগের সময় খুশী ছিলাম না, তেমনি এখন বরখস্তের সময় নাখোশও নই।’
তৃতীয় খলীফা হযরত উসমানের (রা) খিলাফতকালে চতুর্দিকে যখন বিক্ষোভ ও অসন্তোষ ধুমায়িত হয়ে ওঠে, তখন হিজরী ৩৫ সনে তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য খলীফা একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। হযরত আম্মারও ছিলেন এই কমিশনের অন্যতম সদস্য। বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র মিসরের তদন্তভার তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। তিনি মিসর যান।
কমিশনের অন্য সদস্যরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এসে নিজ নিজ এলাকার রিপোর্ট পেশ করেন।কিন্তু হযরত আম্মার ফিরতে আশাতিরিক্ত দেরী করলেন। এদিকে দারুল খিলাফত মদীনায় তাঁর সম্পর্কে নানা রকম গুজব ও ধারণা ছাড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি যখন মিসর থেকে ফিরে এলেন তখন বিদ্রোহ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের দ্বারা তাঁকে প্রভাবিত দেখা গেল। তিনি প্রকাশ্য মিটিং মজলিসে হযরত উসমানের শাসনপদ্ধতি ও প্রাদেশিক ওয়েলীদের নানাবিধ কাজের কঠোর সমালোচনা শুরু করলেন। ফলে খলীফার লোকদের সাথে বিবাদ শুরু হয়ে গেল।একবার উসমানের (রা) চাকর-বাকরেরা তাঁকে এমন মারাত্মক পিটুনি দেয় যে, তাঁর সমস্ত শরীর ফুলে গেল। তিনি পাঁজরের একটি হাড়ে ভীষণ চোট পেলেন। বনী মাখযুমের তাঁর জাহিলী যুগে চুক্তি ছিল। তাঁরা খলীফার দরবারে পৌঁছে হুমকি দেয়, যদি আম্মার এই আঘাত থেকে প্রাণে না বাঁচেন তাহলে আমরা অবশ্যই প্রতিশোধ নেব। (আল-ইসতিয়াব) এমনি ধরনের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। যখন বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা মদীনায় চড়াও হয়, হযরত ‘উসমান (রা) হযরত সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাসকে আম্মারের কাছে বলে পাঠান, তিনি যেন তার প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে ফেরত পাঠান। কিন্তু আম্মার অস্বীকার করেন।(তাবারী)
হযরত উসমান (রা) শহীদ হলেন। খিলাফতের দায়িত্ব হযরত আলীর ওপর ন্যস্ত হলো। হযরত আয়িশা, তালহা, যুবাইর প্রমুখ উসমানের রক্তের বদলা দাবী করে বসরার দিকে চললেন। হযরত আলী কুফাবাসীদেরকে স্বপক্ষে আনার জন্য ইমাম হাসানের সাথে আম্মারকে পাঠালেন কুফায়। হযরত আম্মার যখন কুফা পৌঁছেন, হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা) তখন কুফার জামে মসজিদে এক জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁকে মিম্বর থেকে নামিয়ে দিয়ে প্রথমে হযরত হাসান, পরে হযরত আম্মার ভাষণ দেন এবং আলীর (রা) প্রতি কুফাবাসীদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। পরদিন সকালে প্রায় সাড়ে নয় হাজার সৈনিকের একটি বাহিনী আলীর (রা) পক্ষে লড়বার জন্য আম্মারের পাশে সমবেত হয়।
হিজরী ৩৬ সনে জমাদিউল আখের মাসে বসরার অদূরে ‘যিকার’ নামক স্থাকে হযরত আলী ও আয়িশার বাহিনী মুখোমুখি হলো। হযরত আম্মার কুফার বাহিনী সহ এ যুদ্ধে যোগ দিলেন। যুদ্ধের সূচনাপর্বেই হযরত যুবাইর যখন দেখলেন আম্মার আলীর পক্ষে, তখন তার স্মরণ হলো রাসূলুল্লাহর বাণী, ‘সত্য আম্মারের সাথে, বিদ্রোহী দল তাঁকে হত্যা করবে।’ তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। রণে ভঙ্গ দিয়ে কেটে পড়লেন। এ যুদ্ধে হযরত আম্মারের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি সত্যের ওপর আছেন। তাই অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন এবং বিজয়ী হন। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত।
উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী ও হযরত মুয়াবিয়ার মধ্য সিফ্ফীনের যুদ্ধ হয়। হযরত আম্মার এ যুদ্ধেও হযরত আলীর পক্ষে যোগদান করেন। তখন তাঁর বয়স একানব্বই, মতান্তরে তিরানব্বই বছর। এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জিহাদের অনুপ্রেরণায় ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনি নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, সত্য আলীর (রা) পক্ষে। তাই এই বয়সেও তিনি সিওঙ্ঘের ন্যায় বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। তিনি যেদিকেই আক্রমণ চালাচ্ছিলেন বিপক্ষ শিবির ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিল। একবার বিপক্ষ শিবিরের পতাকাবাহী হযরত আমর ইবনুল আসের ওপর তাঁর নজর পড়লো।তিনি বলেন, ‘আমি এই পতাকাবিহীর বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহর সাথে তিনবার যুদ্ধ করেছি। তার সাথে এ আমার চতুর্থ যুদ্ধ। আল্লাহর কসম, সে যদি আমাকে পরাজিত করে ‘হাজার’ নামক স্থানেও ঠেলে নিয়ে যায়, তবুও আমি বিশ্বাস করবো, আমরা সত্য এবং তারা মিথ্যার ওপর।’(তাবাকাত ১/১৮৫)
সিফফীনের যুদ্ধে আলীর (রা) পক্ষে যোগদানের জন্য তিনি মানুষকে আহবান জানিয়ে বলতেন, “ওহে জনমন্ডলী, আমার সাথে এমন লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদে বের হও, যারা মনে করে তারা উসমানের রক্তের বদলা নিচ্ছে। আল্লাহর কসম, রক্তের বদলা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে তারা দুনিয়ার মজা লাভ করছে। সে মজা আরো লাভ করতে চায়। …… ইসলামের প্রাথমিক যুগে তাদের এমন কোন অবদান নেই যার ভিত্তিতে তারা মুসলিম উম্মার আনুগত্য দাবী করতে পারে। মুসলিম উম্মার নেতৃত্বের কোন হক তাহের নেই। তাদের অন্তরে এমন কিছু আল্লাহর ভীতি নেই যাতে তারা হকের অনুসারী হতে পারে। তারা উসমানের রক্তের বদলার কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। স্বৈরাচারী রাজা হওয়া ছাড়া তদের কোন উদ্দেশ্য নেই”। (রিজালুন হাওলার রাসূল/২১৬)
হযরত উসমান (রা) শহীদ হলেন। খিলাফতের দায়িত্ব হযরত আলীর ওপর ন্যস্ত হলো। হযরত আয়িশা, তালহা, যুবাইর প্রমুখ উসমানের রক্তের বদলা দাবী করে বসরার দিকে চললেন। হযরত আলী কুফাবাসীদেরকে স্বপক্ষে আনার জন্য ইমাম হাসানের সাথে আম্মারকে পাঠালেন কুফায়। হযরত আম্মার যখন কুফা পৌঁছেন, হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা) তখন কুফার জামে মসজিদে এক জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁকে মিম্বর থেকে নামিয়ে দিয়ে প্রথমে হযরত হাসান, পরে হযরত আম্মার ভাষণ দেন এবং আলীর (রা) প্রতি কুফাবাসীদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। পরদিন সকালে প্রায় সাড়ে নয় হাজার সৈনিকের একটি বাহিনী আলীর (রা) পক্ষে লড়বার জন্য আম্মারের পাশে সমবেত হয়।
হিজরী ৩৬ সনে জমাদিউল আখের মাসে বসরার অদূরে ‘যিকার’ নামক স্থাকে হযরত আলী ও আয়িশার বাহিনী মুখোমুখি হলো। হযরত আম্মার কুফার বাহিনী সহ এ যুদ্ধে যোগ দিলেন। যুদ্ধের সূচনাপর্বেই হযরত যুবাইর যখন দেখলেন আম্মার আলীর পক্ষে, তখন তার স্মরণ হলো রাসূলুল্লাহর বাণী, ‘সত্য আম্মারের সাথে, বিদ্রোহী দল তাঁকে হত্যা করবে।’ তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। রণে ভঙ্গ দিয়ে কেটে পড়লেন। এ যুদ্ধে হযরত আম্মারের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি সত্যের ওপর আছেন। তাই অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন এবং বিজয়ী হন। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত।
উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী ও হযরত মুয়াবিয়ার মধ্য সিফ্ফীনের যুদ্ধ হয়। হযরত আম্মার এ যুদ্ধেও হযরত আলীর পক্ষে যোগদান করেন। তখন তাঁর বয়স একানব্বই, মতান্তরে তিরানব্বই বছর। এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জিহাদের অনুপ্রেরণায় ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনি নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, সত্য আলীর (রা) পক্ষে। তাই এই বয়সেও তিনি সিওঙ্ঘের ন্যায় বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। তিনি যেদিকেই আক্রমণ চালাচ্ছিলেন বিপক্ষ শিবির ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিল। একবার বিপক্ষ শিবিরের পতাকাবাহী হযরত আমর ইবনুল আসের ওপর তাঁর নজর পড়লো।তিনি বলেন, ‘আমি এই পতাকাবিহীর বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহর সাথে তিনবার যুদ্ধ করেছি। তার সাথে এ আমার চতুর্থ যুদ্ধ। আল্লাহর কসম, সে যদি আমাকে পরাজিত করে ‘হাজার’ নামক স্থানেও ঠেলে নিয়ে যায়, তবুও আমি বিশ্বাস করবো, আমরা সত্য এবং তারা মিথ্যার ওপর।’(তাবাকাত ১/১৮৫)
সিফফীনের যুদ্ধে আলীর (রা) পক্ষে যোগদানের জন্য তিনি মানুষকে আহবান জানিয়ে বলতেন, “ওহে জনমন্ডলী, আমার সাথে এমন লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদে বের হও, যারা মনে করে তারা উসমানের রক্তের বদলা নিচ্ছে। আল্লাহর কসম, রক্তের বদলা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে তারা দুনিয়ার মজা লাভ করছে। সে মজা আরো লাভ করতে চায়। …… ইসলামের প্রাথমিক যুগে তাদের এমন কোন অবদান নেই যার ভিত্তিতে তারা মুসলিম উম্মার আনুগত্য দাবী করতে পারে। মুসলিম উম্মার নেতৃত্বের কোন হক তাহের নেই। তাদের অন্তরে এমন কিছু আল্লাহর ভীতি নেই যাতে তারা হকের অনুসারী হতে পারে। তারা উসমানের রক্তের বদলার কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। স্বৈরাচারী রাজা হওয়া ছাড়া তদের কোন উদ্দেশ্য নেই”। (রিজালুন হাওলার রাসূল/২১৬)
সিফফীনের যুদ্ধ তখন চলছে। একদিন সন্ধ্যায় হযরত আম্মার কয়েক ঢোক দুধ পান করে বললেন, ‘রাসূল (সা) আমাকে বলেছেন, দুধই হবে আমার শেষ খাবার। তারপর-‘আজ আমি আমার নন্ধুদের সাথে মিলিত হব, আজ আমি মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর সাথীদের সাথে মিলিত হব’-এ কথা বলতে বলতে সৈনিকদের সারিতে যোগ দিলেন। অতঃপর প্রচন্ডবেগে শত্রু শিবিরের ওপর আক্রমণ চালালেন। কারণ, আম্মার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা) ভবিষ্যদ্বাণী এবং তাঁর বিরাট ফজিলাত ও মর্যাদা তাদের জানা ছিল। কিন্তু তদের মধ্যে অনেক নও-মুসলিম ছিল যারা আম্মার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতো না।তাদেরই একজন ইবনুল গাবিয়া-তীর নিক্ষেপ করে আম্মারকে প্রথম মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর অন্য একজন শামী ব্যক্তি তরবারি দিয়ে দেহ থেকে তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
আম্মারকে শহীদ করার পর হত্যাকারী দু’জনই এককভাবে এ কৃতিত্ব দাবী করে ঝগড়া শুরু করে দেয়। ঝগড়া করতে করতে তারা মুয়াবিয়ার (রা) কাছে উপস্থিত হয়। ঘটনাক্রমে হযরত আমর ইবনুল আসও তখন সেখনে উপস্থিত ছিলেন। ব্যাপার দেখে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম,এরা দু’জন জাহান্নামের জন্য ঝগড়া করছে।’ একথায় হযরত আমীর মুয়াবিয়া একটু ক্ষুন্ন হয়ে বললেন, ‘আমর, তুমি এ কি বলছো? যারা আমাদের জন্য জীবন দিচ্ছে, তাদের সম্পর্কে এমন কথা বলছো’? আমর বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এটাই সত্য। আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যদি আমার মরণ হতো, কতই না ভালো হতো।’
হযরত আম্মারের (রা) শাহাদতের পর হযরত আমর ইবনুল আস দারুণ বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি এ সংঘাত থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, আম্মারের হত্যাকারী আমরা নই, বরং যারা তাকে ঘর থেকে বের করে এই যুদ্ধের ময়দানে সংগে করে নিয়ে এসেছে প্রকৃতপক্ষে তারাই তাঁর হত্যাকারী। (তাবাকাত)
হযরত আম্মারের শাহাদাতের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার ফয়সাল হয়ে যায়। হযরত খুযাইমা ইবন সাবিত (রা) উট ও সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কোন পক্ষেই তরবারি কোষমুক্ত করেননি। হযরত আম্মারের শাহাদাতের পর তিনি বুঝলেন, আলীর পক্ষ অবলম্বন করাই উচিৎ। তিনি এবার তরবারি কোষমুক্ত করে হযরত মুয়াবিয়ার (রা) বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহাদাত বরণ করেন। এমনিভাবে যে সকল সাহাবী দ্বিধা-দ্বন্দ্বের আবর্তে দোলা খাচ্ছিলেন, তাঁরাও সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে আলীর (রা) পক্ষ অবলম্বন করেন।
হযরত আলী (রা) তাঁর প্রিয় সংগী হযরত আম্মারের (রা) শাহাদাত শুনে দুঃখের সাথে বলে ওঠেন, “যেদিন আম্মার ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার ওপর আল্লাহ রহম করেছেন, যেদিন সে শাহাদাত বরণ করেছে, তার ওপর আল্লাহ রহম করেছেন এবং যেদিন সে জীবিত হয়ে উঠবে আল্লাহ তার ওপর রহম করবেন। আমি সেই সমই তাঁকে রাসূলুল্লাহর সাথে দেখেছি যখন মাত্র চার-পাঁচ জন সাহাবীর ঈমানের ঘোষণা দানের সৌভাগ্য হয়েছিল।প্রথম পর্যায়ের সাহাবীদের কেউই তাঁর মাগফিরাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে পারেন না। আম্মার এবং সত্য একে অপরের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর হত্যাকারী নিশ্চিত জাহান্নামী।”
অতঃপর হযরত আলী (রা) হযরত আম্মারের কাফন দাফনের নির্দেশ দেন। হযরত আলী জানাযার নামায পড়ান এবং আম্মারের রক্তে-ভেজা কাপড়েই দাফনের নির্দেশ দেন। এ হিজরী ৮৭ সনের ঘটনা। হযরত আম্মার হলেন কুফার মাটিতে সমাহিত রাসূলুল্লাহর (সা) প্রথম সাহাবী।
হযরত আম্মার ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু। তাকওয়া ও খাওফে খোদার কারণে সব সময় চুপচাপ থাকতেন। খুব কম কথা বলতেন। ফিতনা-ফাসাদ থেকে সর্বদা আল্লাহর পানাহ্ চাইতেন। কিন্তু আল্লাহ সবচেয়ে বড় ফিতনা দ্বারা তাঁর পরীক্ষা নেন এবং সার্থকভাবে সত্যের সহায়তাকারী বানিয়ে দেন।
বিনয় ও নম্রতার তিনি ছিলেন মূর্ত প্রতীক। মাটিই ছিল তাঁর আরামদায়ক বিছানা। ওয়ালী থাকাকালেও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। হাট বাজারের কেনাকাটা নিজেই করতেন এবং নিজেই সবকিছু পিঠে বহন করতেন। সব কাজ নিজ হাতে করতেন। হযরত আম্মারের এক সমসাময়িক ব্যাক্তি ইবন আবিল হুজাইল বলেন, ‘আমি কুফার আমীর আম্মারকে দেখলাম, তিনি কুফায় কিছু শশা খরীদ করলেন। তারপর সেগুলি রশি দিয়ে বেঁধে পিঠে উঠালেন এবং বাড়ীর দিকে যাত্রা কলেন। (রিজালুন হাওলার রাসূল-২১১)
আম্মারকে শহীদ করার পর হত্যাকারী দু’জনই এককভাবে এ কৃতিত্ব দাবী করে ঝগড়া শুরু করে দেয়। ঝগড়া করতে করতে তারা মুয়াবিয়ার (রা) কাছে উপস্থিত হয়। ঘটনাক্রমে হযরত আমর ইবনুল আসও তখন সেখনে উপস্থিত ছিলেন। ব্যাপার দেখে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম,এরা দু’জন জাহান্নামের জন্য ঝগড়া করছে।’ একথায় হযরত আমীর মুয়াবিয়া একটু ক্ষুন্ন হয়ে বললেন, ‘আমর, তুমি এ কি বলছো? যারা আমাদের জন্য জীবন দিচ্ছে, তাদের সম্পর্কে এমন কথা বলছো’? আমর বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এটাই সত্য। আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যদি আমার মরণ হতো, কতই না ভালো হতো।’
হযরত আম্মারের (রা) শাহাদতের পর হযরত আমর ইবনুল আস দারুণ বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি এ সংঘাত থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, আম্মারের হত্যাকারী আমরা নই, বরং যারা তাকে ঘর থেকে বের করে এই যুদ্ধের ময়দানে সংগে করে নিয়ে এসেছে প্রকৃতপক্ষে তারাই তাঁর হত্যাকারী। (তাবাকাত)
হযরত আম্মারের শাহাদাতের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার ফয়সাল হয়ে যায়। হযরত খুযাইমা ইবন সাবিত (রা) উট ও সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কোন পক্ষেই তরবারি কোষমুক্ত করেননি। হযরত আম্মারের শাহাদাতের পর তিনি বুঝলেন, আলীর পক্ষ অবলম্বন করাই উচিৎ। তিনি এবার তরবারি কোষমুক্ত করে হযরত মুয়াবিয়ার (রা) বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহাদাত বরণ করেন। এমনিভাবে যে সকল সাহাবী দ্বিধা-দ্বন্দ্বের আবর্তে দোলা খাচ্ছিলেন, তাঁরাও সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে আলীর (রা) পক্ষ অবলম্বন করেন।
হযরত আলী (রা) তাঁর প্রিয় সংগী হযরত আম্মারের (রা) শাহাদাত শুনে দুঃখের সাথে বলে ওঠেন, “যেদিন আম্মার ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার ওপর আল্লাহ রহম করেছেন, যেদিন সে শাহাদাত বরণ করেছে, তার ওপর আল্লাহ রহম করেছেন এবং যেদিন সে জীবিত হয়ে উঠবে আল্লাহ তার ওপর রহম করবেন। আমি সেই সমই তাঁকে রাসূলুল্লাহর সাথে দেখেছি যখন মাত্র চার-পাঁচ জন সাহাবীর ঈমানের ঘোষণা দানের সৌভাগ্য হয়েছিল।প্রথম পর্যায়ের সাহাবীদের কেউই তাঁর মাগফিরাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে পারেন না। আম্মার এবং সত্য একে অপরের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর হত্যাকারী নিশ্চিত জাহান্নামী।”
অতঃপর হযরত আলী (রা) হযরত আম্মারের কাফন দাফনের নির্দেশ দেন। হযরত আলী জানাযার নামায পড়ান এবং আম্মারের রক্তে-ভেজা কাপড়েই দাফনের নির্দেশ দেন। এ হিজরী ৮৭ সনের ঘটনা। হযরত আম্মার হলেন কুফার মাটিতে সমাহিত রাসূলুল্লাহর (সা) প্রথম সাহাবী।
হযরত আম্মার ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু। তাকওয়া ও খাওফে খোদার কারণে সব সময় চুপচাপ থাকতেন। খুব কম কথা বলতেন। ফিতনা-ফাসাদ থেকে সর্বদা আল্লাহর পানাহ্ চাইতেন। কিন্তু আল্লাহ সবচেয়ে বড় ফিতনা দ্বারা তাঁর পরীক্ষা নেন এবং সার্থকভাবে সত্যের সহায়তাকারী বানিয়ে দেন।
বিনয় ও নম্রতার তিনি ছিলেন মূর্ত প্রতীক। মাটিই ছিল তাঁর আরামদায়ক বিছানা। ওয়ালী থাকাকালেও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। হাট বাজারের কেনাকাটা নিজেই করতেন এবং নিজেই সবকিছু পিঠে বহন করতেন। সব কাজ নিজ হাতে করতেন। হযরত আম্মারের এক সমসাময়িক ব্যাক্তি ইবন আবিল হুজাইল বলেন, ‘আমি কুফার আমীর আম্মারকে দেখলাম, তিনি কুফায় কিছু শশা খরীদ করলেন। তারপর সেগুলি রশি দিয়ে বেঁধে পিঠে উঠালেন এবং বাড়ীর দিকে যাত্রা কলেন। (রিজালুন হাওলার রাসূল-২১১)
হযরত আম্মারের (রা) প্রতিটি কাজের মূল প্রেরণা ছিল আল্লাহর রিজামন্দী। সিফফীনের যুদ্ধে যাওয়ার পথে বার বার তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহ, আমি যদি জানতাম পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে অথবা পানিতে ডুব দিয়ে আমার জীবন বিলিয়ে দিলে তুমি খুশী হবে, আমি তোমাকে সেই ভাবে খুশী করতাম। আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তোমার রিজামন্দী। আমি আশা করি, তুমি আমার এ উদ্দেশ্য বিফল করবে না”। (তাবাকাত) তাঁর চারিত্রিক মহত্ব ও ঈমানী বলিষ্ঠতা সম্পর্কে খোদ রাসূল (সা) বলেছেন, ‘আম্মারের শিরা উপশিরায় ঈমান মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রাসূল (সা) অন্য সাহাবীদের নিকট আম্মারের ঈমান নিয়ে গর্ব করতেন। একবার প্রখ্যাত সেনা নায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আম্মারের মধ্যে কোন একটি বিষয় নিয়ে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়। বিষয়টি রাসূলুল্লাহর গোচরে এলে তিনি বলেন, ‘যে আম্মারের সাথে শত্রুতা করবে আল্লাহ তার সাথে শত্রুতা করবেন। যে আম্মারেকে হিংসা করবে আল্লাহও তাকে হিংসা করবেন। অন্য একটি হাদীসে আছে আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমারের অনুসরণ করবে। তোমরা আম্মারের পথ ও পন্থা থেকে হিদায়াত গ্রহণ করবে।
হযরত আম্মার আল্লাহর ইবাদতে বিশেষ মজা পেতেন। সারা রাত আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করতেন। কোন অবস্থাতেই নামায কাযা করতেন না। একবার সফরে ছিলেন। গোসলের প্রয়োজন দেখা দিল। বহু চেষ্টার পরও পানি পেলেন না। তাঁর স্মরণ হলো, মাটিতো পানির বিকল্প। গোসলের পরিবর্তে তিনি সার দেহে ধূলোবালি মেখে নামায আদায় করলেন। সফর থেকে ফিরে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট বিষয়টি বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ‘এমন অবস্থায় শুধু তায়াম্মুমই যথেষ্ট।’
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামানকে (রা) বলা হয় ‘সিররু রাসূলিল্লাহ’-রাসূলুল্লাহর (সা) যাবতীয় গোপন জ্ঞানের অধিকারী। তিনি যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, লোকেরা যখন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাবে তখন কার সাথে থাকতে আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন? জবাবে বললেন, ‘তোমরা ইবন সুমাইয়্যার সাথে থাকবে। তিনি আমরণ সত্য থেকে বিচ্যুৎ হবেন না। মহান সাহাবী হুজাইফার এটাই ছিল জীবনের শেষ কথা। (রিজালুন হাওলার রাসূল-২১২)
রাসূল (সা) থেকে তিনি বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁরন থেকে আবু মূসা আশয়ারী, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবন জাফর প্রমুখ সাহাবীসহ বহু তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করছেন।
হযরত আম্মার আল্লাহর ইবাদতে বিশেষ মজা পেতেন। সারা রাত আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করতেন। কোন অবস্থাতেই নামায কাযা করতেন না। একবার সফরে ছিলেন। গোসলের প্রয়োজন দেখা দিল। বহু চেষ্টার পরও পানি পেলেন না। তাঁর স্মরণ হলো, মাটিতো পানির বিকল্প। গোসলের পরিবর্তে তিনি সার দেহে ধূলোবালি মেখে নামায আদায় করলেন। সফর থেকে ফিরে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট বিষয়টি বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ‘এমন অবস্থায় শুধু তায়াম্মুমই যথেষ্ট।’
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামানকে (রা) বলা হয় ‘সিররু রাসূলিল্লাহ’-রাসূলুল্লাহর (সা) যাবতীয় গোপন জ্ঞানের অধিকারী। তিনি যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, লোকেরা যখন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাবে তখন কার সাথে থাকতে আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন? জবাবে বললেন, ‘তোমরা ইবন সুমাইয়্যার সাথে থাকবে। তিনি আমরণ সত্য থেকে বিচ্যুৎ হবেন না। মহান সাহাবী হুজাইফার এটাই ছিল জীবনের শেষ কথা। (রিজালুন হাওলার রাসূল-২১২)
রাসূল (সা) থেকে তিনি বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁরন থেকে আবু মূসা আশয়ারী, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবন জাফর প্রমুখ সাহাবীসহ বহু তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করছেন।
No comments: