বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ বল-প্রয়োগে বাধ্য করা (৬৪৭১-৬৪৮২)
হাদিস ৬৪৭১
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) দোয়া করতেনঃ হে আল্লাহ! আইয়াশ ইবনু আবূ বারীআ, সালামা ইবনু হিশাম, ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে নাজাত দাও। হে আল্লাহ! অসহায় মুমিনদেরকে নাজাত দাও। হে আল্লাহ! মুযার গোত্রের উপর তোমার পাঞ্জা কঠোর করে নাও এবং তাদের ওপর ইউসুফের দুর্ভিক্ষের বছর সমুহের ন্যায় বছর চাপিয়ে দাও।
হাদিস ৬৪৭২
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব তায়েফী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (বা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস এমন যার মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে। ১ আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২, কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসা। ৩- জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় ফূফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করাকে অপছন্দ করে।
হাদিস ৬৪৭৩
সাঈদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি মনে করি উমর (রাঃ)-এর কঠোরতা আমাকে ইসলামের উপর অনড় করে দিয়েছে। তোমরা উসমান (রাঃ)-এর সাথে যা করেছ তাতে যদি উহুদ পাহাড় ফেটে যেত তা হলে তা সঙ্গতই হত।
হাদিস ৬৪৭৪
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) খাববাব ইবনু আরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি কা’বা ঘরের ছায়ায় তাঁর চাঁদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, (আমাদের জন্য কি) সাহায্য কামনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? তিনি বললেনঃ তোমাদের পূর্বেকার লোকদের মধ্যে এমন ব্যাক্তিও ছিল যাকে ধরে নিয়ে তার জন্য যমীনে গর্ত করাতে। তারপর করাত এনে মাথায় আঘাত হেনে দু-ই টুকরা করে ফেলা হত। লোহার শলাকা দিয়ে তার গোশত ও হাড্ডি খসানো হত। এতদসত্ত্বেও তাকে তার দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারত না। আল্লাহর কসম! এ দ্বীন অবশ্যই পূর্নতা লাভ করবে। এমন হবে যে সান আ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত ভ্রমণকারী ভ্রমণ করবে। অথচ সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে না এবং নিজের মেষপালের জন্য বাঘের ভয় থাকবে কিন্তু তোমরা তো তাড়াহুড়া করছ।
হাদিস ৬৪৭৫
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে ছিলাম। হঠাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ তোমরা ইহুদীদের কাছে চল। আমি তাঁর সাথে বের হয়ে পড়লাম এবং বায়তুল-মিদরাস নামক শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পৌছলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে তাদেরকে সন্বোধন করে বললেনঃ হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা মুসলমান হয়ে যাও, নিরাপদ থাকবে। তারা বলল হে আবূল কাসিম! আপনি (আপনার দায়িত্ব) গৌছে দিয়েছে। তিনি বললেনঃ এটাই আমি চাই। তারপর দ্বিতীয়বার কথাটি বললেনঃ তারা বলল, হে আবূল কাসিম! আপনি পৌছে দিয়েছেন। এরপর তিনি তৃতীয়বার তা পুনরাবৃত্তি করলেন। আর বললেনঃ তোমরা জেনে রেখো যে, যমীন কেবল আল্লাহ ও তার রাসুলের। আমি তোমাদেরকে দেশান্তর করতে মনস্থ করেছি। তাই তোমাদের যার অস্থাবর সস্পত্তি রয়েছে, তা যেন সে বিক্রি করে নেয়। অন্যথায় জেনে রেখো, যমীন কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর।
হাদিস ৬৪৭৬
ইয়াহইয়াহ ইবনু কাযাআ (রহঃ) খানসা বিনত খিযাম আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে তার পিতা (অনুমতি ব্যতীত) বিয়ে দিলেন। আর সে ছিল বিধবা। কিন্তু এ বিয়ে তার পছন্দ হল না। তাই সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে জানাল। ফলে তিনি তার এ বিয়ে রদ (বাতিল) করে দিলেন।
হাদিস ৬৪৭৭
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম! হে আল্লাহর রাসুল! মহিলাদের বিয়ে দিতে তাদের অনুমতি নিতে হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যা। আমি বললাম, কুমারীর কাছে অনুমতি চাইলে তো লজ্জাবোধ করে; ফলে চুপ থাকে। তিনি বললেনঃ তার নীরবতাই তার অনুমতি।
হাদিস ৬৪৭৮
আবূ নুঁমান (রহঃ) জাবিব (রাঃ) থেকে বর্নিত। জনৈক আনসারী ব্যাক্তি তার এক গোলাম মুদাববর বানিয়ে দেয়। অথচ তার এ ছাড়া অন্য কোন মাল ছিল না। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি বললেনঃ- কে আমার কাছ থেকে এ গোলাম ক্রয় করবে? নূআয়ম ইবনু নাহহাম (রাঃ) আটশ- দিরহামের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করলেন। রাবী বলেন আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ঐ গোলামটি কিবতী গোলাম ছিল এবং (ক্রয়ের) প্রথম বছরই মারা যায়।
হাদিস ৬৪৭৯
হুসাইন ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এ আয়াতঃ হে মু’মিনগণ। নারীদেরকে জবরদস্তিভাবে তোমাদের উত্তরাধিকার মনে করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়- আয়াতের শেষ পর্যন্ত- এর ব্যাখ্যায় বলেন, তাদের রীতি ছিল, যখন কোন ব্যাক্তি মারা যেত তখন তার অভিভাবকগণই তার স্ত্রীর ব্যাপারে অধিক হকদার বলে মনে করত। ইচ্চা করলে তাদর মেধ্য কেউ তাকে বিয়ে করত, ইচ্ছা করলে তাকে (অন্যত্র) বিয়ে দিত, আর ইচ্ছা করলে তাকে বিয়ে দিত না। তারই স্ত্রীর অভিভাবকদের তুলনায় নিজেদের কে অধিক হকদার বরে মনে করত। এ ব্যাপারে উক্ত আয়াত নাযিল হয়।
হাদিস ৬৪৮০
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘সারা’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে হিজরত করে এমন এক জনপদে উপনীত হলেন, যেখানে একজন স্বৈরাচার বাদশাহ্ছিল। সে তাঁকে বলে পাঠাল যে, যেন তিনি ‘সারা’ কে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি তাকে পাঠিয়ে দিলেন। সে “সারার” দিকে অগ্রসর হতে লাগল। অপর দিকে “সারা” উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। আর বললেন, হে আল্লাহ্! আমি যদি তোমার ও তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ঈমান এনে থাকি তাহলে আমার উপর ঐ কাফেরকে কর্তৃত্ব প্রদান করো না। ফলে সে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে (মাটিতে পড়ে) গোড়ালী দিয়ে ঘষর্ণ করতে লাগল।
হাদিস ৬৪৮১
ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, না সে তার প্রতি জুলুম করবে, না তাকে অন্যের হাওলা করবে। যে কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে আল্লাহ্তার প্রয়োজন মেটাবেন।
হাদিস ৬৪৮২
মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইকে সাহায্য কর। সে জালিম হোক অথবা মজলুম হোক। এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মজলুম হলে তাকে সাহায্য করব, তা তো বোধ্যগম্য ব্যাপার। কিন্তু জালিম হলে তাকে সাহায্য করব, তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ তাকে অত্যাচার থেকে বিরত রাখবে। আর এটাই হচ্ছে তার সাহায্য।
No comments: