মাইয়্যেতের গোসল
মাইয়্যেতের গোসল
মাইয়্যেতের গোসল
১।মাসআলাঃ মৃত্যু হওয়া মাত্র সকলকে সংবাদ দিয়া কবর ও কাফনের বন্দোবস্তের জন্য লোক পাঠাইবে এবং গোসল দেওয়ার বন্দোবস্ত করিবে। একখানা চওড়া তক্তা অথবা তক্তপোষের চতুর্দিকে ৩, ৪ বা ৭ বার লোবান অথবা আগরবাতি জ্বালাইয়া মোর্দাকে উহার উপর শোয়াইবে এবং তাহার পরিধানের সব কাপড় খুলিয়া ফেলিয়া শুধু নাভি হইতে হাঁটু পর্যন্ত একখানা কাপড় দ্বারা ঢাকিয়া রাখিবে।
২।মাসআলাঃ যদি গোসল দেওয়ার জন্য কোন পৃথক স্থান থাকে, যাহাতে পানি অন্য দিকে বহিয়া যাইতে পারে, তবে ভাল কথা, নচেৎ কাঠ বা চৌকির নীচে গর্ত খুঁড়িবে যেন, পানি সেখানে জমা হয়। যদি গর্ত না খোঁড়ে এবং সমস্ত পানি ঘরে ছড়াইয়া পড়ে তবুও কোন গোনাহ হইবে না। উদ্দেশ্য শুধু যাতায়াতে যেন কাহারও কষ্ট না হয় এবং যেন পড়িয়া না যায়।
৩।মাসআলাঃ মোর্দাকে গোসল দেওয়ার নিয়ম এই যে, প্রথমে তাহাকে এস্তেঞ্জা করাইয়া দিবে। কিন্তু খবরদার! তাহার কাপড়ের নীচের জায়গা স্পর্শ বা দর্শন করিবে না। হাতে কিছু নেকড়া পেঁচাইয়া লইয়া কাপড়ের নীচে হাত প্রবেশ করাইয়া, প্রথমে ঢিলা দ্বারা তারপর পানি দ্বারা এস্তেঞ্জা করাইবে। তারপর ওযূর জায়গাসমূহ ওযূর তরতীব অনুসারে ধোয়াইবে; কিন্তু কুলি করাইবার, নাকে পানি দিবার এবং কব্জা পর্যন্ত হাত ধোয়াইবার আবশ্যক নাই। প্রথমে মুখ ধোয়াইবে, তারপর প্রথমে ডান হাত, তারপর বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়াইবে। তারপর মাথা মছেহ করাইবে। তারপর প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা তিন তিন বার ধোয়াইবে। তারপর মাথা মছেহ করাইবে। তারপর প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা তিন তিন বার ধোয়াইবে। যদি কিছু তুলা বা নেকড়া ভিজাইয়া তিনবার দাঁতের উপর দিয়া এবং নাকের ভিতর দিয়া হাত ফিরাইয়া দেওয়া হয়, তবে তাহাও জায়েয। কিন্তু যদি গোসলের হাজতের অবস্থায় অথবা হায়েয-নেফাসের অবস্থায় মৃত্যু হইয়া থাকে, তবে এইরূপে মুখে এবং নাকে পানি পৌঁছান যরূরী। গোসল দেওয়াইবার পূর্বে মোর্দার নাকে এবং কানে কিছু তুলা ভরিয়া দিবে যাহাতে পানি ঢুকিতে না পারে। এইরূপে ওযূ করাইবার পর মোর্দার মাথা সাবান, খইল অথবা অন্য কোন জিনিস দ্বারা ধুইয়া পরিষ্কার করিয়া দিবে। তারপর মোর্দাকে বাম কাতে শোয়াইয়া তাহার ডান পার্শ্বের শরীরের উপর; মাথা হইতে পা পর্যন্ত বড়ই (কুল) পাতাসহ গরম পানি (দ্বারা তিন বা পাঁচবার) ঢালিয়া পরিষ্কার করিয়া ধুইবে। তারপর আবার ডান কাতে শোয়াইয়া বাম পার্শ্বেও এরূপ পানি দ্বারা তিন কি পাঁচবার ধোয়াইবে। এইরূপে গোসল হইয়া গেলে গোসলদাতা তাহার নিজের শরীরের সঙ্গে টেক লাগাইয়া মোর্দাকে কিঞ্চিৎ বসাইবে এবং আস্তে আস্তে তাহার পেটের উপর মালিশ করিবে। ইহাতে পেট হইতে যদি কিছু ময়লা বাহির হয়, তবে কুলুখ করাইয়া শুধু ময়লাটা ধুইয়া দিবে। এই ময়লা বাহির হওয়াতে মোর্দার ওযূ বা গোসল টুটিবে না। কাজেই ওযূ বা গোসল দোহরাইতে হইবে না, শুধু ময়লাটা ধুইয়া দিবে। তারপর আবার মোর্দাকে বামকাতে শোয়াইয়া কর্পূরের পানি তাহার সর্বশরীরে মাথা হইতে পা পর্যন্ত তিনবার ঢালিবে। তারপর শুকনা কাপড় দ্বারা সমস্ত শরীর ভাল মতে মুছিয়া দিয়া কাফন পরাইবে।
৪।মাসআলাঃ বড়ই পাতার অভাবে শুধু পানি কিছু গরম করিয়া তাহা দ্বারা ৩ বার ধুইবে। খুব বেশী গরম পানি দ্বারা গোসল দিবে না। উপরে গোসলের যে নিয়ম বলা হইয়াছে উহাই সুন্নত তরীকা। যদি তিনবার না ধুইয়া একবার মাত্র সর্বশরীর পানি দ্বারা ধুইয়া দেয়, তাহাতেও ফরয আদায় হইয়া যাইবে।
৫।মাসআলাঃ মোর্দাকে কাফনের উপর রাখিবার সময় স্ত্রীলোকের মাথায় এবং পুরুষের মাথায় ও দাড়িতে আতর লাগাইয়া দিবে এবং কপালে, নাকে, উভয় হাতের তালুতে উভয় হাঁটুতে এবং উভয় পায়েঅর্থাৎ সজদার সকল জায়গায় কর্পূর লাগাইয়া দিবে। কেহ কেহ কাফনে আতর লাগায় বা তুলা লাগাইয়া কানে দেয়, তাহা করিবে না। ইহা মূর্খতা; শরীঅতে যতটুকু আছে তাহার অতিরিক্ত করিবে না।
৬।মাসআলাঃ মোর্দার চুল আঁচড়াইবে না, নখ, চুল ইত্যাদি কাটিবে না।
৭।মাসআলাঃ পুরুষের গোসল দেওয়ার জন্য কোন পুরুষ পাওয়া না গেলে, তাহার স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন মেয়েলোক মাহরাম হইলেও তাহাকে গোসল দিতে পারিবে না। তাহার স্ত্রী না থাকিলে তায়াম্মুম করাইতে হইবে। কিন্তু শরীরে হাত লাগাইবে না। তায়াম্মুম করাইবার সময় হাতে দস্তানা (বা কাপড়) পেঁচাইয়া লইবে।
৮।মাসআলাঃ স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিতে এবং কাফন পরাইতে পারে, ইহা জায়েয। কিন্তু মৃত্যু স্ত্রীকে স্বামী স্পর্শ করিতে ও হাত লাগাইতে পারিবে না; কিন্তু দেখা বা কাপড়ের উপর দিয়া হাত লাগান দুরুস্ত আছে।
৯।মাসআলাঃ যে মেয়েলোক হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় আছে তাহার জন্য মোর্দাকে গোসল দেওয়া মকরূহ এবং নিষেধ।
১০।মাসআলাঃ যে সর্বাপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী আত্মীয়, তাহারই গোসল দেওয়া উচিত, কিন্তু যদি এরূপ লোক গোসল না দিতে পারে, তবে যথাসাধ্য কোন দীনদার পরহেযগার লোকেই গোসল দেওয়া ভাল।
১১।মাসআলাঃ গোসল দিবার সময় যদি দূষণীয় কিছু দৃষ্ট হয় বা খোদা না করুন মোর্দার চেহারা কাল বা বিকৃত দেখা যায়, তবে খবরদার! কস্মিনকালেও কাহারও নিকট বলিবে না এবং আলোচনাও করিবে না; ইহা না-জায়েয। অবশ্য ঐ মৃত ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে শরীঅত বিরুদ্ধ কাজযথা, নাচ বা গান-বাদ্য কিংবা ব্যভিচার করিত (অথবা সুদ, ঘুষ খাইত বা যুলুম করিত) তবে অন্য লোকে যাহাতে এইসব গোনাহ হইতে বাঁচিয়া থাকে, তদুদ্দেশ্যে উহা প্রকাশ করা জায়েয আছে।
বেহেশতী গওহর হইতে
১।মাসআলাঃ পানিতে ডুবিয়া কেহ মারা গেলে তাহাকে পানি হইতে উঠাইবার পর গোসল দেওয়া ফরয। মৃত্যুর পর পানিতে শরীর ধোয়া হইয়াছে বলিয়া গোসল মা’ফ হইবে না। কেননা, গোসল জীবিত লোকের উপর ফরয; তাহাদের ফরয ইহাতে আদায় হয় নাই। অবশ্য পানি হইতে উঠাইবার সময় যদি গোসলের নিয়্যত করিয়া পানিতে নাড়াচাড়া দিয়া উঠায়, তবে তাহাতে গোসল হইয়া যাইবে। এইরূপে যদি কোন মৃতের উপর বৃষ্টির পানিতে বা অন্য কোন উপায়ে তাহার শরীর ধুইয়া যায়, তবুও তাহাকে গোসল দেওয়া জীবিত লোকদের উপর ফরয হইবে।
২।মাসআলাঃ যদি কোথাও কোন মৃত লোকের শুধু মাথা (বা হাত) পাওয়া যায়, তবে উহাকে গোসল দিতে হইবে না, অমনিই দাফন করিয়া রাখিবে। আর যদি শরীরের অর্ধেকের বেশী পাওয়া যায়মাথাসহ হউক বা মাথা ছাড়া হউক কিংবা মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া যায়তবুও গোসল দিতে হইবে। (জানাযাও পড়িতে হইবে, নতুবা নহে।) আর যদি কম অর্ধেক পাওয়া যায়, মাথাসহ হউক বা মাথা ছাড়া হউক, তবে গোসলের দরকার হইবে না।
৩।মাসআলাঃ যদি কোথাও কোন মৃত লোক মুসলমান, না অমুসলমান, চিনা না যায়, তবে (মুসলমানের কোন আলামত পাওয়া গেলে তাহাকে গোসল দিতে হইবে এবং জানাযা পড়িতে হইবে। একান্ত যদি কোনই আলামত না পাওয়া যায়, তবুও) দারুল ইসলামে ঐ লোক পাওয়া গেলে তাহাকে গোসল দিতে হইবে এবং নামায পড়িতে হইবে; (দারুল ইসলাম না হইলে এবং মুসলমানের কোন চিহ্নও পাওয়া না গেলে, গোসল দিতে বা জানাযা পড়িতে হইবে না।)
৪।মাসআলাঃ যদি মুসলমান এবং কাফেরদের লাশ একত্র মিশিয়া যায় এবং মুসলমান অমুসলমা চিনিতে পারা যায়, তবে শুধু মুসলমানদের লাশ বাছিয়া তাহাদের গোসল দিতে হইবে, আর চিনা না গেলে সকলকে গোসল দিতে হইবে।
৫।মাসআলাঃ যদি কোন মুসলমানের কোন কাফির আত্মীয় মারা যায়, তবে তাহাকে তাহার স্বধর্মীদের হাওলা করিয়া দিবে এবং যদি এই মুসলমান চাড়া তাহার ধর্মের কেহ তাহার কাফন-দাফন করিবার না থাকে, বা নিতে না চায় তবে এই মুলমানই অগত্যা তাহাকে গোসল দিবে। কিন্তু সুন্নত তরীকা অনুযায়ী গোসল দিবে না, অর্থাৎ, ওযূ করাইবে না, মাথাও পরিষ্কার করিবে না, কাফুর বা খোশবু লাগাইবে না, নাপাক বস্তু ধোয়ার ন্যায় ধুইবে, কাফিরকে সাতবার ধুইলেও সে পাক হইবে না। যদি কেহ তাহাকে লইয়া নামায পড়ে তবে তাহার নামায দুরুস্ত হইবে না।
৬।মাসআলাঃ মুসিলম রাজ্যের রাজদ্রোহী বা ডাকাত যদি যুদ্ধের সময় মারা যায় তাহাকে গোসল দিবে না।
৭।মাসআলাঃ মৃত মোর্তাদ (ইসলামত্যাগী) কে গোসল দিবে না এবং যে ধর্মে সে গিয়াছে সে ধর্মালম্বীরা তাহার লাশ চাহিলে তাহাদিগকেও দিবে না।
৮।মাসআলাঃ পানির অভাবে যদি কোন মৃতকে তায়াম্মুম করান হয় এবং পরে পানি পাওয়া যায়, তবে পানি দিয়া গোসল দিতে হইবে।
(মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে যে গোসল দিবে তাহার আগে ওযূ এবং পরে গোসল করা মোস্তাহাব মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে অনেক ছওয়াব পাওয়া যায়। গোসল দেওয়ার মজুরী লওয়া জায়েয নহে, ছাওয়াবের নিয়্যতে দেওয়া উচিত।)
No comments: