Breaking News
recent

সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৫৩

সহিহ মুসলিম
হাদিস নং ৫৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)

একদা আমরা (সহাবাগণ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঘিরে বসেছিলাম। আমাদের জামা‘আতে আবূ বাক্‌র এবং ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝ থেকে ওঠে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ অতিক্রান্তের পর আমরা শঙ্কিত হলাম যে, তিনি কোথাও কোন বিপদের সম্মুখীন কিনা। তাই আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর আমি সর্বপ্রথম বিচলিত হলাম। তাই আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খোঁজে বের হয়ে পড়লাম। আমি বানু নাজ্জারের জনৈক আনসারীর বাগানের নিকট এসে উপনীত হলাম। আর বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশের কোন পথ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সেজন্য চারদিকে ঘুরলাম। কিন্তু পেলাম না। হঠাৎ দেখতে পেলাম বাইরের একটি কুয়া থেকে একটি নালা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। সংকীর্ণ নালাকে ‘জাদওয়াল’ বলা হয়। অতঃপর আমি নিজেকে শেয়ালের ন্যায় সংকুচিত করে নর্দমার মধ্য দিয়ে গিয়ে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপনীত হলাম। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রাহ  নাকি? আমি বললাম, জী-হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? আমি বললাম, আপনি আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ উঠে চলে আসলেন, আর দীর্ঘক্ষণ পরও ফিরে না যাওয়ায় আমরা বিচলিত হয়ে পড়েছি। আমাদের অনুপস্থিতিতে কোথাও বিপদের সম্মুখীন হলেন কিনা আমাদের এ আশঙ্কা হলো। আর আমি সর্বপ্রথম বিচলিত হয়ে পড়ি। আমি এ দেয়ালের কাছে এসে শেয়ালের ন্যায় সঙ্কুচিত হয়ে নালার ভিতর দিয়ে এখানে উপস্থিত হলাম। অন্যান্যরা আমার পেছনে আছে। তিনি তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ! আমার জুতা জোড়া সাথে নিয়ে যাও। এ বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে বলোঃ ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই’ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” বর্ণনাকারী [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) ] বলেন, সর্বপ্রথম ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ! জুতা জোড়া কার? আমি বললাম, আল্লাহর রসূলের। তিনি আমাকে এ জুতা জোড়াসহ এই বলে পাঠিয়েছেন যে, ‘যে ব্যক্তি প্রশান্ত মনে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিবে” তিনি [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) ] বলেন, আমার এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) আমার বুকের উপর এমন জোরে চপেটাঘাত করলেন যে, আমি পেছন দিকে পড়ে গেলাম। আর তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ! তুমি (রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) নিকট ফিরে চলো। তাই আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কাঁদো কাঁদো অবস্থায় ফিরে আসলাম। আমার পেছনে পেছনে ‘উমার (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরায়রাহ! তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমার সাথে ‘উমারের সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং আপনি আমাকে যে সুসংবাদ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে এটা জানালে তিনি আমার বুকে এমন জোরে ঘুষি মারলেন যে, আমি পিছন দিকে পড়ে যাই। তিনি এটাও বলেছেন যে, আমি যেন (আপনার নিকট) ফিরে আসি। রসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘উমার! কোন বস্তু তোমাকে এমন কাজ করতে উদ্যত করলো? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আপনি কি আপনার জুতা জোড়াসহ আবূ হুরায়রাহ কে এ বলে পাঠিয়েছেন যে, যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে বলো, যে ব্যক্তি সর্বান্তঃকরণে এ সাক্ষ্য দিবে যে, “আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। ‘উমার (রাঃ) বললেন, এরূপ করবেন না, কেননা আমার আশংকা হচ্ছে এতে লোকেরা (‘আমাল বর্জন করে) এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে, কাজেই লোকদেরকে ‘আমাল করার সুযোগ দিন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তাদেরকে ছেড়ে দাও। (ই.ফা. ৫৪; ই.সে. ৫৫)

No comments:

Powered by Blogger.